পরিবেশ সংরক্ষণে এগিয়ে আসতে হবে সর্বস্তরের জনগণকেও

| রবিবার , ৫ জুন, ২০২২ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

আজ ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন হতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন এবং একই সঙ্গে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা এবং ৫ জুন থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা-২০২২ এর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘অনলি ওয়ান আর্থ: লিভিং সাস্টেইনেবিলিটি ইন হারমনি উইথ নেচার’। যার ভাবানুবাদ ‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন’। অন্যদিকে, জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- যুদ্ধ-প্রাণে প্রকৃতি প্রতিবেশ, আগামী প্রজন্মের টেকসই বাংলাদেশ।

জনগণের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদফতর ও বন অধিদফতরের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরাসরি সমপ্রচার করবে। এ উপলক্ষে জাতীয় সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং পরিবেশ অধিদফতর ও বন অধিদফতর হতে এ সংক্রান্ত স্মরণিকা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় যথাযোগ্য গুরুত্বের সাথে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হবে।

গত দু বছর করোনা ভাইরাসের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে স্বাভাবিকভাবেই দূষণের মাত্রা ছিল অন্য বছরের তুলনায় অনেক কম। ঢাকা-চট্টগ্রামে ছিল না অন্যান্য সময়ের মতো শব্দদূষণও। কারণ রাস্তাঘাটে গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের চলাচল ছিল খুবই কম। কিন্তু করোনা সংক্রমণ ও তাতে মৃত্যুহার ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার সাথে সাথে দূষণের মাত্রাও বাড়তে শুরু করে। সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করার লক্ষ্যে অফিস-আদালত ও দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দূষণও বাড়ে। বায়ু ও শব্দদূষণের মাত্রা এখন নগরবাসীর কাছে মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এভাবে চলতে থাকলে বিশেষ করে ঢাকা মহানগরী একসময় মনুষ্যবাসের জন্য সত্যিকার অর্থেই অনুপযোগী হয়ে পড়বে। গত বছর একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং দীর্ঘ সময় ধরে দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে এখানে প্রায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে। বলা হয়েছে, করোনাকালের প্রথমদিকে যখন লকডাউন এবং ছুটির জন্য দোকানপাট ও অন্যান্য অফিস-আদালতসহ প্রায় সব কল-কারখানা বন্ধ ছিল; তখন ঢাকার বায়ুর মান বেশ ভালো ছিল। কিন্তু শীতের শুরুতেই প্রচুর ধুলাবালি এবং আকাশজুড়ে ধোঁয়াশার কারণে পুনরায় ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ঢাকার বাতাস।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসের বৈশ্বিক সূচকে বিশ্বের সব দেশকে পেছনে ফেলে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা। এর পরপরই পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাস্তায় প্রতিদিন পানি দেওয়াসহ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নিতে দুই সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মহামান্য আদালত। কিন্তু সে নির্দেশ কি যথাযথভাবে পালিত হয়েছে? পরিবেশবিদরা বলেছেন, যেহেতু এখন ঢাকাসহ তার চারপাশে নানা রকম উন্নয়নকাজ চলছে; সেহেতু রড সিমেন্টসহ ইটের চাহিদাও বেড়ে গেছে, আর সে কারণেই বিগত বছরগুলোতে ঢাকার চারপাশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইটভাটা ও ঢাকার এই মারাত্মক বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে এই ইটভাটাগুলোর চিমনির ধোঁয়া।

অঞ্জন কুমার রায় বলেছেন, প্রকৃতির ওপর হানা, প্রকৃতিকে পাশ কাটিয়ে উন্নয়ন, আপাত দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও ভবিষ্যতে পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে অন্ধকার। তবে এটা যে অতি দূরে নয় তা সহজেই অনুমেয়। যতই দিন যাচ্ছে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে। দেখা দিচ্ছে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব। এ পরিবর্তন পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গে মনুষ্যকুলের ওপরও দেখা যায়। আমাদের যা কিছু আছে তাতে আমরা সুখী নই। আত্মতুষ্টির জন্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী গাছকে বিপন্ন করতে কুণ্ঠাবোধ করি না। প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করে কৃত্রিমতায় সুখ খুঁজে পাই। সেখানে ইট, বালি গেঁথে মানসিক প্রশান্তি আনয়নের চেষ্টা করি। শব্দ, বায়ুসহ সকল প্রকার দূষণ নিয়ন্ত্রণেই সরকার কাজ করছে। এ বিষয়ে নতুন বিধিমালা তৈরি হচ্ছে। পরিবেশ সংরক্ষণে সর্বস্তরের জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে