সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে সমন্বয়কদেরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের স্বজনদের দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ।
গতকাল রোববার দুপুরের পর সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেন, কেউ যদি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং তারা যদি বিভিন্ন জায়গায় বলেন তাদের সঙ্গে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু হতে পারে। এটা জানার পর আমাদের নৈতিক দায়িত্ব তাদের নিরাপদে নিয়ে আসা।
গত শুক্রবার দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতাল থেকে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে আনা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে কয়েক ঘণ্টা কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। খবর বিডিনিউজের।
সন্ধ্যার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।
এর কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমার জানামতে তারা (তিন সমন্বয়ক) নিজেরাই তাদেরকে ইনসিকিউরড (অনিরাপদ) মনে করছে। তারা মনে করছিল তাদেরকে যারা বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছে, তাদেরকে কেউ কেউ থ্রেট (হুমকি) করছে। সেজন্য আমরা মনে করি, তাদের সিকিউরিটির জন্যই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার যে কারা তাদের থ্রেট দিচ্ছে, কারা তাদের ধমকাচ্ছে। সেটা জানার জন্যই তাদের ডেকে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমরা নেঙট ব্যবস্থা নেব।
এ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে হেফাজতে নেওয়া হয়। গতকাল নেওয়া হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এভাবে নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক ডিবি কার্যালয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে দেখা করেননি হারুন অর রশীদ। পরে শিক্ষকরা সাংবাদিকদেরকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এই সমন্বয়কদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার দাবি জানিয়ে বলেন, পরিবারেই তারা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকবেন।
গতকাল নাহিদের মা মমতাজ নাহার ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে তার ছেলের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, ডিবি বলছে নিরাপত্তার কারণে তাদের কাছে রেখেছে। সন্তান মা–বাবার কাছে নিরাপদ। ডিবি অফিসে কিসের নিরাপত্তা?
সাংবাদিকদেরকে হারুন বলেন, যাদেরকে নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা নিয়ে এসেছি তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব দুঃশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। তাদের পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে সেই বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই।
আন্দোলকারীদের ভয়ভীতি দেখানো, মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, এসব গুজব। কেউ কেউ গুজব ছড়িয়ে ভিউ বাড়িয়ে টাকা আয় করতে চায়।
উসকানিদাতার তথ্য জানার চেষ্টা : সমন্বয়কদের সঙ্গে কথা বলে কোটা আন্দোলন নিয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান হারুন অর রশীদ। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সুন্দর একটা আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলনের সময় তাদের সঙ্গে কারা কারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। কারা কারা তাদের উসকানি দিয়েছিল।
সমন্বয়করা কিছু নাম ও নম্বর দিয়েছে জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, এদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জামায়াতে ইসলামী–বিএনপি অনুপ্রবেশ করে এবং একটা গণতান্ত্রিক সরকারকে পতন ঘটাতে চেয়েছিল। তারাই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আগুন লাগিয়েছে। এই চক্র যদি আবার আন্দোলনের নামে তাদের ব্যবহার করে আর সে কারণে তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে হেফাজতে রেখেছি।