চট্টগ্রামে পরিবহন ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রায় প্রতিদিনই পণ্যবাহী পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহনে মাদকের চালান ধরা পড়ছে। যাত্রীবাহী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, মিনি ট্রাকের সাহায্যে ইয়াবার বড়ো বড়ো চালান পাচার হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানের মাধ্যমে সারা দেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে।
সর্বশেষ গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্ণফুলী থানাধীন নতুন ব্রিজ টোল প্লাজা এলাকায় ঢাকাগামী একটি কাভার্ডভ্যানে তল্লাশি চালিয়ে ৬৫ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ কাভার্ডভ্যানের দুই চালককে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর ও দক্ষিণ) বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলো, কাভার্ডভ্যানের চালক মো. ইসলাম (৩৮) ও মো. হাবিব (২৮)। গ্রেপ্তার দুজন জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ইয়াবা টেকনাফের ডিলারের কাছে আসে। এর পর টেকনাফ ও ঢাকার ডিলারের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি প্যাকেটের গায়ে বিশেষ কোড নম্বর দিয়ে ইয়াবা প্যাকেটজাত করা হয়। ওই কোড নম্বর মিলিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ডিলাররা বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী চালান পৌঁছে দিয়ে থাকে তারা। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর ও দক্ষিণ) বিভাগের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার শেখ সাব্বির হোসেন বলেন, কাভার্ডভ্যানের ভেতরের পাটাতনে বিশেষ কায়দায় তৈরি সুরক্ষিত একটি চেম্বারের মাধ্যমে ইয়াবা পরিবহন করা হতো। মূলত ইয়াবা পরিবহনের উদ্দেশ্যেই গাড়িটির ভিতরে পাটাতনে বিশেষ কায়দায় সুরক্ষিত এই চেম্বার তৈরি করা হয়েছিল, যা স্বাভাবিকভাবে দেখলে দৃষ্টিগোচর হয় না। তিনি আরও জানান, কাভার্ডভ্যানটিতে কোনো ধরনের মালামাল ছিল না। গ্রেপ্তার দুই চালক মূলত কাভার্ডভ্যান চালানোর আড়ালে ইয়াবা পরিবহন করতো। তাদের বিরুদ্ধে ৪টি মাদক মামলা রয়েছে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। গ্রেপ্তার চালক দুজন নগর গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা একটি চক্রের হয়ে কাজ করে। গত চার থেকে পাঁচ বছর যাবৎ চক্রটি পরিবহন ব্যবসার আড়ালে টেকনাফ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। চক্রটি টেকনাফ থেকে ইয়াবা রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে দিতো। এই চক্রটি পণ্যবাহী পরিবহনের চালক–সহকারিদের মোটা অংকের টাকার ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ইয়াবার চালান পরিবহনের জন্য প্রলুব্ধ করে থাকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ইয়াবা সেবনকারীর সংখ্যা দিনদিন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। চাহিদার কারণে মাদক ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড়ো বড়ো চালান দেশে নিয়ে আসছে। টেকনাফে একটি ইয়াবা ৫০–৭০ টাকা কেনাবেচা হয় যা চট্টগ্রামে আসার পর বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০–৩০০ টাকা। এরপর ঢাকায় আরেক দফা বেড়ে ইয়াবার দাম হয় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। ইয়াবার পরিবহন খরচ নির্ধারণ করা হয় সংখ্যার ভিত্তিতে। এক পিস ইয়াবা চট্টগ্রামে আনতে নেওয়া হয় ৪ থেকে ৫ টাকা। এই হিসাবে ১ লাখ ইয়াবা টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে আনতে নেওয়া হয় ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা। ইয়াবা পরিবহনের লেনদেন নগদে নেওয়া হয় না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়।