পরিকল্পনা ঠিক করতে হাসিনাকে সময় দিতে চায় ভারত

দিল্লিতে বাংলাদেশ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের খবর, তিনি কোথায়?

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৭ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

প্রবল গণআন্দোলন আর সহিংসতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ও দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি এখন কী করবেন, তা ঠিক করতে তাকে সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিবেশী দেশটির সরকার। এএনআই জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার ভারতের কেন্দ্র সরকারের আহ্বানে সর্বদলীয় বৈঠকের পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বৈঠকের পর জয়শঙ্কর বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারত সরকারের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা ঠিক করতে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে কিছুটা সময় দিতে চাইছে। এ বিষয়টি শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

ছাত্রজনতার গণআন্দোলনের মুখে সোমবার দুপুরে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামরিক বিমানে চড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। সোমবার ভারতের স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ৩৬ মিনিটে দিল্লির ৩১ কিলোমিটার দূরে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমান। বিমানঘাঁটিতে শেখ হাসিনাকে গ্রহণ করেন বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা এয়ার অফিসার কমান্ডিং (এওসি) সঞ্জয় চোপড়া। সেখানে ভারতের বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় এয়ার কমান্ড চিফ এয়ার মার্শাল পিএম সিনহাও দেখা করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সোমবারই খবর আসে, যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন শেখ হাসিনা। অনুমতি মিললে সেখানেই তিনি যেতে চান। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য সর্বদলীয় বৈঠকে বসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

এনডিটিভি জানিয়েছে, গতকাল ভারতের পার্লামেন্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হয়। সেখানে বাংলাদেশের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতি এবং এই পরস্থিতি ঘিরে সম্ভাব্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো নিয়ে সব দলের নেতাদের অবহিত করেন জয়শঙ্কর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংসহ অনেকে। এছাড়া বৈঠকে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রাও অংশ নেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানান, পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নে এবং বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা নিয়ে কেন্দ্রের কৌশল ঠিক করতে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিরাজমান এই পরিস্থিতিতে সরকার যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ভারত সরকার বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান তিনি। বৈঠকে উপস্থিত হয়ে সমর্থন দেওয়ায় বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতাদের ধন্যবাদ জানান জয়শঙ্কর।

রাহুল গান্ধী এ পর্যন্ত ভারত সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ নির্বাচন হওয়ার আগে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে ভারতের উচিত হবে সম্পর্ক নিরূপণে মাঝারি ও দীর্ঘ এই দুই মেয়াদের একটি পরিকল্পনা রাখা।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি ওপর গভীর নজর রাখা হচ্ছে জানিয়ে জয়শঙ্কর বলনে, দেখে শুনে পদক্ষেপ নেবে সরকার। বৈঠকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আন্দোলনসহিংসতা শুরু হলে সেখানে বসবাসরত ২০ হাজার ভারতীয়র মধ্যে ধাপে ধাপে আট হাজার নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ঢাকায় আমাদের হাইকমিশন কাজ করছে। সেখানে অবস্থান করা ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় ভারতের সর্বদলীয় বৈঠকে। জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশের কোথাও কোথাও ভারতবিদ্বেষী আচরণের প্রকাশ হয়েছে। অবশ্যই সব নাগরিককে রক্ষা করতে হবে।

বৈঠক শেষে এক টুইটে জয়শঙ্কর লিখেছেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। এর আগে সোমবার রাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের প্রিন্সিপাল সচিব পিকে মিশ্র, ‘র’এর প্রধান রবি সিনহা এবং গোয়েন্দা বিভাগের (আইবি) পরিচালক তপন ডেকা। বৈঠকে বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিষয়ে মোদীকে অবহিত করা হয়।

বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলের পর সোমবার সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে ভারত। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে।

হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের খবর : গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগের পর ভারতে চলে যাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হওয়ার খবর এসেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে। বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সূত্রের বরাতে গতকাল ভারতের নিউজ এইটিন লিখেছে, পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো শেখ হাসিনাকে জায়গা দিতে অনাগ্রহী বলে যে খবর এসেছে, তার মধ্যেই এমন তথ্য দিল নিউজ এইটিন।

শেখ হাসিনা কোথায় : সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার লিখেছে, পদত্যাগের পর শেখ হাসিনা যে বিমানে করে সোমবার ভারতে পৌঁছেছিলেন, গতকাল সকালে তা পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে উড়ে গেছে। সকাল ৯টা নাগাদ বিমানটি দিল্লির কাছে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেস থেকে উড়োজাহাজটি রওনা দেয়। কিন্তু সেটি কোথায় গেছে, সেখানে শেখ হাসিনা ছিলেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

তবে সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, শেখ হাসিনা এখনও ভারতেই আছেন। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চেয়েছেন বলে সোমবার খবর দেয় ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।

আনন্দবাজার লিখছে, শেখ হাসিনা লন্ডনে যেতে চাইলেও সেখান থেকে এখনও সবুজ সংকেত মেলেনি। ব্রিটেন ‘না’ করে দিলে ইউরোপে থাকতে চান তিনি। অন্য কোনো দেশে আশ্রয় নেওয়া যেতে পারে, আপাতত ভারতে থেকেই তা বিবেচনা করে দেখছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।

হাসিনাসহ মন্ত্রীদের ভিসা প্রত্যাহার নিয়ে যা বলল মার্কিন দূতাবাস : বাংলানিউজ জানায়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য মন্ত্রীদের ভিসা প্রত্যাহার নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি নয় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। গতকাল ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কাছে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের মার্কিন ভিসা প্রত্যাহার করেছে কিনা।

এ বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ভিসা রেকর্ডগুলো মার্কিন আইনের অধীনে গোপনীয়। তাই আমরা পৃথক ভিসার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি না।

সোমবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়, শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাভেল পাস পেয়েছেন সালাহউদ্দিন, শিগগির দেশে ফিরছেন
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ তিন লাশ