আজ সোমবার পবিত্র লাইলাতুল বরাত। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আজ দিবাগত রাতে পালিত হবে সৌভাগ্য ও ক্ষমার এই রাতটি। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। মহিমান্বিত এ রাতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাতে আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকিরসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করেন।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গতবার শবে বরাত পালনের জন্য মসজিদে না গিয়ে ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশনা জারি করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এবার কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী প্রত্যেকের মাস্ক পরা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে, শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
শবে বরাত ফার্সি শব্দ, এর অর্থ ভাগ্য রজনী। তবে আরবিতে একে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত বা মুক্তির রাত। একে বলা হয় সৌভাগ্যের রজনী। এ রাতে মানবসমাজ তথা বিশ্বের সব সৃষ্টির ভাগ্য নির্ধারণ করেন মহান আল্লাহ তায়ালা। তিনি মানুষের জীবন-মৃত্যুর দিনক্ষণ নির্ধারণ এবং রুজি-রোজগার বণ্টন করেন। নাজিল করেন বান্দার প্রতি অশেষ রহমত। বান্দাদের আকুতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণেরও রাত এটি। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং বিপদগ্রস্তদের দেখান উত্তরণের পথ। এ কারণেই মুসলমানদের কাছে শবে বরাত বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ রাতকে মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত হিসেবে অবহিত করা হয়। যে রাতে আল্লাহর নির্দেশে তাঁর রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। তাই শবে বরাত অনেক মর্যাদা ও বরকতপূর্ণ রাত। এ রাতে আল্লাহর কাছে পাপ থেকে মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা করা হয়।
শবে বরাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, সেজদা দীর্ঘ করা ও দোয়া-ইস্তেগফার ও জিকির-আসকার করা মহানবীর (সা.) হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়া এই রাতে তিনি জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে কবর জিয়ারত করেছেন। হজরত আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, শাবানের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এই রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখ। কেননা এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছ কি কোনো রিজিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন (ইবনে মাজাহ)। তাই এই রাতের আগমনের পূর্বে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন থাকলে তা ঠিক করা এবং কারও হক থাকলে তা আদায় করা বাঞ্ছনীয়।
ইসলামী ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বোরহান উদ্দিন মো. আবু আহসান আজাদীকে বলেন, শবে বরাতে গত বছরের মতো মসজিদে না যাওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বলুয়ার দিঘি খানকা : নগরীর বলুয়ার দিঘির পাড় খানকায়ে কাদেরিয়া ছৈয়্যদিয়া তৈয়বিয়ায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এশার নামাজের পর রাত ৯টায় পবিত্র কোরআন মজিদ তেলাওয়াত, পবিত্র নাতে রাসুল (সা.), খতমে গাউছিয়া শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর রয়েছে সালাতু-সালাম বিশেষ মোনাজাত। রাত ২টায় জামায়াতে তাহাজ্জুতের ১২ রাকাত নামাজ, মিলাদ মাহফিল ও আখেরিমোনাজাত। এছাড়া আগামীকাল বিকাল ৩টা থেকে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ’র (রহ.) চন্দ্র মাসিক ফাতেয়া শরীফ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম দরবার শরীফ : চট্টগ্রাম দরবার শরীফে আজ বিভিন্ন কর্মসূূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাদে এশা দরবারে আগত ভক্ত-মুরিদদের উদ্দেশে শবে বরাতের তাৎপর্য নিয়ে তকরির পেশ করবেন চট্টগ্রাম দরবারের সাজ্জাদানশীন আল্লামা ছৈয়দ জাফর ছাদেক শাহ (মা.)। এছাড়া রাতে জিকির-কিয়াম, ছামা মাহফিল, জামাত সহকারে সালাতুত তসবীহের নামাজ ও বিশেষ মোনাজাত রয়েছে।