পদ্মায় দুই নৌযানের সংঘর্ষ ২৬ লাশ উদ্ধার

মাকে শেষবার দেখতে যাচ্ছিলেন, পথে হারালেন স্বামী-সন্তান

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৪ মে, ২০২১ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মায় গতকাল সকালে বালুবাহী নৌযান ও যাত্রীবাহী স্পিডবোটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় নদী থেকে ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সকাল ৭টার দিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে আসছিল স্পিডবোট। পথে বালুবাহী বাল্কহেড বলগেটের সাথে সংঘর্ষ হয়।
শিবচর থানার ওসি মিরাজ হোসেন জানান, ২৬ জনের লাশের পরিচয় পেয়েছি। সবার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্পিডবোডটিতে অন্তত ৩০ জন আরোহী ছিল বলে শিমুলিয়া ঘাটের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। খবর বিডিনিউজের। ঘটনা তদন্তে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের
একটি কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ চার সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে। পদ্মা পারাপারে থাকা স্পিডবোটগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান।
স্পিডবোটটি চলছিল লুকিয়ে : দুর্ঘটনা কবলিত স্পিডবোটটি লকডাউনের মধ্যে লুকিয়ে চলছিল বলে দাবি করেছে নৌচলাচল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল নৌ দুর্ঘটনার পর বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক এই দাবি করেন।
লকডাউনের মধ্যে তা কীভাবে হলো? এই প্রশ্নে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান বলেন, শিমুলিয়া ঘাট তো তালা মারা। ওই ঘাট দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করছে না। লঞ্চগুলোও ঘাটে নোঙর করা। তিনি বলেন, স্পিডবোটটির চালক চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গোপনে যাত্রী তুলে পারাপার করছিল।
স্পিডবোটটি অবৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ নয়। এটির চলাচলের অনুমতি ছিল। জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে পারাপার হতে হলে ফেরি ব্যবহারের অনুরোধ জানান কমডোর গোলাম সাদেক।
মাকে শেষবার দেখতে যাচ্ছিলেন, পথে হারালেন স্বামী-সন্তান : মায়ের মৃতদেহ দেখতে ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে স্বামী আর সন্তান হারিয়েছেন ফরিদপুরের আদুরি বেগম। গতকাল মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আদুরির স্বামী আরজু মিয়া ও দেড় বছরের শিশু ইয়ামিন।
স্বামী আর সন্তানের সঙ্গে একই স্পিডবোটে আদুরিও ছিলেন। তিনি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। আহত হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাবাজার ঘাটের কাছে দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা অন্যান্য লাশের মধ্যে স্বামী আর সন্তানকে খুঁজে পান। আদুরির আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে এখানকার পরিবেশ।
আদুরি জানান, মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢাকা থেকে ফরিদপুর গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন তিনি স্বামী ও সন্তানসহ। ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার আর কিছু রইল না। বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
আদুরি বেগমসহ বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী বলেন, তাদের যাত্রার শুরু থেকেই বেপরোয়া গতিতে স্পিডবোটটি চালানো হচ্ছিল। বেপরোয়া গতির করণে তীরে নোঙর করা বালু বোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে যাত্রীদের অভিযোগ।
লকডাউনে সড়ক, নৌ এবং বিমান চলাচল নিষেধ রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নৌযান চলছিল। এছাড়া তাতে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হয়েছিল বলেও যাত্রীদের অভিযোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে গাছে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ
পরবর্তী নিবন্ধপুরো পরিবার হারাল মীম