প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে পদ্মা ব্রিজ থেকে ফেলে দেয়া নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তার মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে জীবনের হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আপনি জীবনের হুমকি দিচ্ছেন। এ মুহূর্তে প্রয়োগ না থাকলেও জীবনের হুমকি দেয়ার জন্য কিন্তু দেশে আইন আছে। সুতরাং রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় থাকতে দেন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে সম্মানের সাথে ব্যবহার শিখতে হবে। তা না হলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠনিক রূপ পাবে না।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে নগরের পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। ‘বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর হত্যার হুমকি’র প্রতিবাদে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন। বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
আমীর খসরু আরো বলেন, বেগম জিয়াকে ফেলে দিবেন, মনে হয় বাপের টাকা দিয়ে ব্রিজ করেছি সেখানে কেউ উঠলে ফেলে দিব। টাকাটা কার? ১০ হাজার কোটি টাকার ব্রিজ ৪০ হাজার কোটি টাকায় তৈরি করা হয়েছে। বাকি ৩০ হাজার কোটি টাকা কোথায় গেছে? বড় বড় কথা বলার আগে উত্তর দিতে হবে। তবে আমরা জানি কোথায় গেছে। কোন অ্যাকাউন্টে দুবাই, আমেরিকা ও মালেশিয়ায় গেছে? কোন অ্যাকাউন্টে কানাডায় গেছে। কয়টা বাড়ি, কতগুলো প্রোপার্টি কিনেছেন। সব জানি। এগুলো সব বের হবে।
আমীর খসরু বলেন, গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াকে পদ্মা ব্রিজ থেকে ফেলে দেবে বলে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তার অর্থ অনেক কিছু হতে পারে। একটি অর্থ এমন হতে পারে, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) তাকে পছন্দ করেন না। কারণ তিনি আপনার চেয়ে জনপ্রিয় এবং দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলের সভানেত্রী। দেশনেত্রী বের হলে লক্ষ মানুষের সমাগম হবে, সেটাকে আপনি ভয় পান। আপনি সমাবেশ করলে পয়সা দিয়ে লোক আনলেও তারা থাকতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খসরু বলেন, বেগম জিয়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থেকে এরশাদের পতন ঘটান। আপনি সেই এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেশের সঙ্গে বেঈমানি করেছেন।
এ মুহূর্তে বাংলাদেশে দুটো শক্তি রয়েছে বলে মন্তব্য করে খসরু বলেন, একটি গণতন্ত্রের পক্ষে অন্যটি বিপক্ষের শক্তি। একটি জনগণ ও তাদের মানবাধিকারের পক্ষে, অন্যটি এ সবের বিপক্ষে। একটি জনগণের কল্যাণের পক্ষে এবং অন্যটি জনগণের টাকা লুট করে বিদেশে প্রেরণের শক্তি। একটি জনগণের সব অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে অন্যটি কেড়ে নেয়ার শক্তি। জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার কোনদিকে যাবেন।
বিভিন্ন জায়গা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলাকে ক্ষমতাসীনদের শেষ চেষ্টা উল্লেখ করে বলেন, এ সবে কাজ হবে না। জনগণের যে জোয়ার উঠেছে তাতে চুনোপুটি, চাপাতি পার্টি, চুরিচামারি পার্টি, হেলমেট লীগ, সন্ত্রাসী লীগ কোনো লীগই থাকবে না। জনগণ এদের বর্ডার পর্যন্ত নিয়ে যাবে। পালানোর পথ পাবে না।
সরকারের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু বলেন, পদ্মা ব্রিজের জন্য আমরা কোনো ঋণ নিই নাই বলছেন। কিন্তু প্রতিমাসে যে টাকা বিদেশে পরিশোধ করছেন, এটি কিসের টাকা? এটা ঋণের টাকা না? প্রতিদিন পকেট থেকে টাকা বের করে পদ্মা ব্রিজ বানাইছেন! মিথ্যা কথা বলছেন জাতির সামনে। বিশ্বব্যাংক তাদের দুর্নীতির কারণে পদ্মা ব্রিজের প্রকল্প বাতিল করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মামলা হওয়ার পরও বিচার করেনি এ সরকার। তিনি বলেন, দুই গুণেরও বেশি টোলের টাকা দিয়ে পদ্মা ব্রিজ পার হতে হবে। এ টাকা দিবে বাংলাদেশের জনগণ।
তিনি বলেন, উন্নয়ন দেখাচ্ছেন। কয়দিন পর এর মজা বুঝবেন। উন্নয়নের ঠেলায় ডলার একশ টাকা পার হয়ে গেছে। এই ডলারে যখন মালামাল আমদানি হবে, জিনিসপত্রের দাম বাড়বে তখন উন্নয়নের ঠেলা বুঝবেন। সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা বিদেশে টাকা জমিয়েছেন চুরি ও দুর্নীতি করে। দেশের মানুষতো টাকা জমায়নি। তাদের আয় দিয়ে চলতে হবে। দেশের মানুষ কীভাবে চলবে?
তিনি বলেন, এখন বিদেশ যাওয়া বন্ধ বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন বন্ধ করে লাভ কী। মোক্ষম সময়ে তো সব খাওয়া হয়ে গেছে। খাওয়ার তো বাকি নাই। এখন দেশের মানুষকে ফেরত দেয়ার সময়। তিনি বলেন, আমরা আর বাড়ি ফিরে যাব না। ওদের মধ্যে কম্পন শুরু হয়েছে। ওরা কিন্তু পুলিশকে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। কিন্তু পুলিশতো বোকা নয়। তারাও দেশের মানুষ। তাদেরও পরিবার আছে। তারা কি বুঝে না দেশের মানুষ কী চায়? বুকে সাহস রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কাপুরুষদের ভয় পাবেন না। আমরা খালি হাত হলেও তাদের হাতে চাপাতি কেন।
যারা সত্যিকারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতো তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে খসরু বলেন, আওয়ামী লীগ এখন সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ চালায় এখন সন্ত্রাসীরা। যখনই বিপদ আসবে তখন দেখবেন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাবে। তখন কিন্তু সত্যিকারের আওয়ামী লীগাররা শেখ হাসিনার জন্য নামবে না। কারণ তারাও ভুক্তভোগী।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রই হচ্ছে জোর করে ক্ষমতায় থাকা। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও তারা জোর করে, সন্ত্রাস দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, সমাবেশে আসার সময় আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এখন থেকে যেখানে হামলা করবে সেখানে পাল্টা আঘাত করতে হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে শেখ হাসিনা যে ভাষায় কথা বলেছেন তা পুরো জাতির জন্য লজ্জাজনক। দেশবাসী তার কথায় বিস্মিত। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য যাবতীয় শিষ্টাচারকে অতিক্রম করেছে। জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন রসাতলে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। আর এর সঙ্গে জড়িত সরকারি দলের লোকেরা।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, শেখ হাসিনা বেগম জিয়াকে নিয়ে শুধু বাজে মন্তব্যই করেননি, খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনৈতিক বিদ্বেষও ছড়িয়েছেন। আমরা তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই। আবু সুফিয়ান বলেন, এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা নেই।
নগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন নগর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ আজিজ, মো. মিয়া ভোলা, এড, আবদুস সাত্তার, অধ্যাপক ইউনুছ চৌধুরী, নুরুল আমিন, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, মহিলাদলের মনোয়ারা বেগম মনি, জেলী চৌধুরী।