বছর খানেক আগে খুলে দেওয়া দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর ব্যয় আরেক দফা বাড়ছে, এবার আলোচিত প্রকল্পটির ব্যয় ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের মেয়াদও বেড়েছে এক বছর। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনীর এ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার। দেশের সব থেকে বড় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করছে সেতু বিভাগ। ২০০৭ সালে প্রকল্পটি নেওয়ার সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পরে ২০০৯ সালে প্রথম সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা করা হয়। এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে দ্বিতীয় সংশোধনী আসে। সবশেষ বিশেষ সংশোধনী নামে আরেক দফা ব্যয় বাড়ালে তা ৩০ হাজার ১৯৩ কোটিতে উন্নীত হয়। এবার তৃতীয় সংশোধনী এনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকায় উন্নীত করা হল। আর মেয়াদ বেড়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। খবর বিডিনিউজের।
বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, এবার মূলত প্রকল্পটির সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময় ভ্যাট ও আয়কর বৃদ্ধিজনিত কারণে ব্যয় বাড়ছে। এছাড়াও মূল সেতু ও নদীশাসন কাজের জন্য নিয়োজিত পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় মহাসড়ক এন– ৮ এর কালভার্ট ও সড়কের অংশ বেড়েছে। সেতুর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে।
টাকার অবমূল্যায়নকে ব্যয় বাড়ার আরেকটি কারণ হিসেব উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্পটি যখন গ্রহণ করা হয় তখন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৬৯ টাকার মতো। সেটা এখন ১০৭ টাকার মতো। এসব কারণে ব্যয় বাড়ছে।
আরও যেসব প্রকল্প অনুমোদন : ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত সভায় মোট ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়ার কথা জানান। এসব প্রকল্পের সম্মিলিত ব্যয় প্রায় ১৯ হাজার ৫৯৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬ হাজার ২৬০ কোটি ৭২ লাখ টাকা, প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৩ হাজার ২০৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকার যোগান হবে। ‘প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রিনিউরশিপ অ্যান্ড রেজিল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্প, ব্যয় ৬ হাজার ৯১১ কোটি টাকা (প্রায়)।
‘বিল্ডিং ক্লাইমেট রেসিলিয়েন্ট লাইভলিহুড ইন দ্য ভালনারেবল ল্যান্ডস্ক্যাপস ইন বাংলাদেশ (বিসিআরএল)’ প্রকল্প, ব্যয় ৭৬ কোটি টাকা। ‘বরিশাল জেলার সদর উপজেলায় চরকাউয়া, চাঁদমারী, জাগুয়া, লামচরি ও চরমোনাই এলাকা কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প (১ম পর্যায়)’ প্রকল্প, ব্যয় ৫১৩ কোটি টাকা (প্রায়)। ‘ইমপ্রুভিং কম্পিউটার অ্যান্ড সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং টারশিয়ারি এডুকেশন প্রজেক্ট’ প্রকল্প, ব্যয় এক হাজার ২২০ কোটি টাকা (প্রায়)। ‘সেইফার সাইবারস্পেইস ফর ডিজিটাল বাংলাদেশ: এনহেন্সিং ন্যাশনাল অ্যান্ড রিজিওনাল ডিজিটাল ইনভেস্টিগেশন ক্যাপাবিলিটি অব বাংলাদেশ পুলিশ’ প্রকল্প, ব্যয় ৫৯ কোটি টাকা। ‘ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার পুননির্মাণ প্রকল্প, ব্যয় ১১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ‘বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা’ প্রকল্প, ব্যয় ৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। ‘ঢাকা–নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্প, ব্যয় ২৮০ কোটি টাকা (প্রায়)। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেইটসমূহের পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন’ প্রকল্প, ব্যয় ২৬ কোটি টাকা (প্রায়) এবং ‘জিটুজি ভিত্তিতে দুটি ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার ও দুটি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ সংগ্রহ’ প্রকল্প, ব্যয় ২ হাজার ৬২১ কোটি টাকা (প্রায়)।