পতেঙ্গা ডিপো থেকে তিন কোটি টাকার ৯টি পণ্যের চালান জব্দ

রপ্তানির আড়ালে মানি লন্ডারিং

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

দলিল জাল করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ভুয়া পণ্য রপ্তানির সময় ৯টি চালান জব্দ করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। জব্দকৃত এসব চালানে টিশার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির ঘোষণা দিলেও জব্দ চালানে বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, শার্ট, লেগিন্স, শালসহ ঘোষণা বহির্ভূত অসংখ্য পণ্য পাওয়া যায়।

 

যা ৩ কোটি টাকারও বেশি। গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পতেঙ্গা এসএপিএল (ওসিএল) ডিপো থেকে তৈরি পোশাকের এ চালান জব্দ করা হলেও গতকাল গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ঢাকার পরিচালক মো. শাকিল খন্দকার।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকার দক্ষিণখানের আশকোনা মোল্লার টেক এলাকার সাবিহা সাকি ফ্যাশন দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি দলিল জালিয়াতি করে পণ্য রপ্তানি করে আসছে। এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর পতেঙ্গা এলাকার এসএপিএল (ওসিএল) ডিপোতে অভিযান চালান শুল্ক গোয়েন্দারা।

ওই অভিযানে ১৫টি বিল অব এক্সপোর্ট (বিই) পর্যালোচনা করে রপ্তানি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এ সময় ওই ১৫টি বিল অব এক্সপোর্টের পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এসব দলিল যাচাই করার জন্য অগ্রণী ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়। এর জবাবে ব্যাংকটির প্রধান শাখা থেকে জানানো হয়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন তাদের গ্রাহক নয় এবং বিল অব এক্সপোর্ট সংশ্লিষ্ট ইএক্সপিগুলো এ ব্যাংকের অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা।

এর পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন ভুয়া ইএঙপি এবং এলসি কিংবা সেলস কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছিলো। যেহেতু জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি হয়েছে সেই কারণে এই চালানগুলোর বিপরীতে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বৈধ পন্থায় দেশে প্রত্যাবাসনের সুযোগ না থাকায় এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান শুল্ক গোয়েন্দাকে জানায়, তারা এ রপ্তানি কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এ বিষয়ে তারা উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। অভিযানের পরপরই এ ডায়েরি (জিডি নম্বর ২৬৩৮, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩) করা হয়েছিল। এছাড়া এসএপিএল ডিপোতে জব্দ পণ্য চালানের কায়িক পরীক্ষার সময় প্রতিষ্ঠানটির সিএন্ডএফ এজেন্ট লিম্যাঙ শিপার্স লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি বলে জানান শুল্ক গোয়েন্দারা।

পরে ১৫টি বিল অব এঙপোর্ট পর্যালোচনা করে শুল্ক গোয়েন্দারা জানতে পারেন এসব চালানের মধ্যে ৬টি এর আগেই রপ্তানি হয়ে গেছে। বাকি ৯ চালানের পণ্য ডিপোতে পাওয়া যায়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই রপ্তানিকারকের ৯৪টি পণ্য চালানোর হদিস পান শুল্ক গোয়েন্দারা। এর মধ্যে ৮৫টি চালান এরইমধ্যে রপ্তানি হয়ে গেছে। রপ্তানি হওয়া পণ্যের ওজন ৮৮২ মেট্রিক টন। টাকার অংকে ঘোষিত মূল্য ২২ কোটি। অন্যদিকে জব্দ ৯ চালানে ১১৮ টন পণ্য রয়েছে। এসবের ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি টাকার কিছু বেশি। মালয়েশিয়া, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে পণ্যগুলো রপ্তানি করা হচ্ছিল।

এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ভুয়া এলসি এবং মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য রপ্তানির আড়ালে মানি লন্ডারিং করা হচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য শুল্ক গোয়েন্দা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অধিদপ্তর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার মাস কমার পর ফের বাড়ল জেট ফুয়েলের দাম
পরবর্তী নিবন্ধ৭৪ ভাগই শহরের শিক্ষার্থীদের দখলে সবচেয়ে কম পার্বত্য তিন জেলায়