প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি বিষয়ে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা নতুন মেয়াদে তার সরকারের মূল কাজ। তিনি বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, দাম নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের হামলার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি আঘাত আসতে পারে। বাজারে খাদ্যদ্রব্যের কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখি না। তবে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ এবং রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, মনে হচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল জনগণের ভোগান্তি বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। এর জন্য আমাদের যথাযথভাবে তদারকি বাড়াতে হবে। তাকে ও আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, কিন্তু দেশের মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।
অন্যদিকে, পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে নিজ নিজ সেক্টর নিয়ে কঠোর বার্তা দিলেন কয়েকজন মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রী। অনিয়ম–দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, মজুতদারির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার ঘোষণা দেন তাঁরা। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তাঁরা। আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, সামনে রমজান মাস। দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সেদিকে উচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে। এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, আমি বসে থাকার লোক নই। আমার প্রথম কাজ–রোজায় জিনিসপত্রের দাম যেন না বাড়ে সেটি দেখা।
সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মজুতদারদের শক্ত হাতে দমন করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। সিন্ডিকেট ভাঙার বিষয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। কিছু লোক এ ধরনের কাজ করে থাকে। বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট টুলস রয়েছে। কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব না, জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করব। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ধান–চালের অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযান জোরদার করবে সরকার। তিনি বলেন, দেশে ধান উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমাদের খাদ্য মজুতও ভালো। বাজারে প্রচুর সরবরাহ আছে। তবে মিলাররা প্রতিযোগিতা করে ধান কেনায় প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়ছে। এ অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তিনি আরও বলেন, মজুতবিরোধী আইন ইতোমধ্যে পাশ হয়েছে। দ্রুত বিধি প্রণয়ন করে তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
আসলে যে বিষয়টি আমাদের জীবনধারণের ক্ষেত্রে বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষজ্ঞের মতে, এ আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ একাধিক। প্রথমত, মুনাফালোভী মজুদদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্কট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করে সমাজের বৃহত্তর অংশ। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেতে থাকে।
বাজারের পরিস্থিতি যাতে সবসময় সরকারের নখদর্পণে থাকে, সে জন্য নিয়মিত বাজার মনিটারিং জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘বাজার পরিদর্শনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দুর্নীতির লাগামহীন ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এসব পদক্ষেপ নেওয়া হলে পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব।’
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও প্রতিটি মন্ত্রী যেভাবে নিজ নিজ সেক্টর নিয়ে কঠোর বার্তা দিলেন, তাতে সাধারণ জনগণ আশাবাদী হয়ে উঠছেন। আমরা মনে করি, যেসব চ্যালেঞ্জ সরকারের সামনে আছে, সেসব মোকাবেলা করার শক্তি তাদের আছে।