ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ পরিদর্শন করেছেন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী। পরিদর্শনকালে তিনি দেখতে পান সরকার নির্ধারিত চিনির দামের বিষয়ে বিক্রেতা নিজেই জানেন না। আহাদ ট্রেডিংয়ের বিক্রেতা আবু তাহের ১২৬ টাকায় চিনি ক্রয় দেখিয়ে বিক্রি করছেন ১৪৭ টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ডিও কেনাবেচার রশিদ দেখাতে ব্যর্থ হন। হাত বদলের সময় কত কমিশন পান তার চালানও দেখাতে পারেননি তারা। এসময় কমিশনের সঙ্গে থাকা জেলা প্রশাসনের টিম জানিয়েছে, পণ্যমূল্য কারসাজিতে জড়িত ৬০০ জনের নামের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিদর্শনকালে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, একটি পণ্য আমদানিকারকের গুদাম থেকে খাতুনগঞ্জের কমিশন এজেন্টের হাতে আসতে অন্তত ৮ থেকে ১০ বার হাত বদল হচ্ছে। সব পক্ষ ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে পরের জনের কাছে বিক্রি করছে। বারবার হাত বদলের কারণেই নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এ কারণে যেকোনো নিত্যপণ্য ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়েকগুণ দাম বাড়ছে। এছাড়া আমদানিকারক ও কমিশন এজেন্টের সম্পর্ক নিয়েও অস্বচ্ছতা রয়েছে।
পরিদর্শন শেষে কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমান খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন করেছে। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসাবান্ধব সরকার পরিচালনা করছেন। ব্যবসায়ীদের মাঝে সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। ফেয়ার কম্পিটিশনে সবাই উপকৃত হবে। কারণ আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে ভোক্তা। প্রতিযোগিতা আইন যত ভালভাবে বাস্তবায়ন হবে ততই মঙ্গল। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারে সম্পর্ক ইদুর–বিড়ালের সম্পর্ক নয়। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন পাবলিক সেক্টরের পাশপাশি প্রাইভেট সেক্টরও দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, সারা বাংলাদেশে পণ্য আমদানি করা হয় অথচ পণ্যের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র খাতুনগঞ্জকে দায়ী করা হয়। এছাড়া খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ীদের বারবার দায়ী করার ফলে তাদের পরিবার পরিজনকে প্রতিনিয়ত সমাজে লজ্জার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়া ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের পণ্যের মূল্য বিশাল ব্যবধান থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য আলমগীর পারভেজ বলেন, ওজন স্কেলের কারণে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে পণ্যের মূল্য বেশি। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য আবু তাহের, জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ জসীম উদ্দীন, অমর কান্তি দাশ, মো. মহিউদ্দীন, মোহাম্মদ ইদ্রিস, মো. রফিকুল্লাহ, রানা দেব নাথ, মোহাম্মদ ইউনুছ, বোরহানউদ্দীন, সাইফুদ্দীন প্রমুখ।