পটিয়ায় মহাসড়কে যাত্রী বেশে ভয়ংকর ছিনতাইকারী চক্র বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। এ চক্রটি পটিয়ার বাসস্টেশন, ডাকবাংলো, থানার মোড় ও পোস্ট অফিস মোড়সহ বিভিন্ন স্টপিজ থেকে সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী তোলে। পরে পটিয়ার বাদামতল, মনসার টেক গৈড়লার টেক, আমজুর হাট ও বাইপাস সড়ক এলাকায় নির্জনস্থানে এলে গলায় ছুরি ও রশি পেঁচিয়ে টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নেয় এবং চলন্ত গাড়ি থেকে যাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। এতে অনেক যাত্রী গুরুতর আহতও হচ্ছেন। গত শুক্রবার রাত ১০টায় চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া থানাধীন গৈড়লার টেক এলাকায় যাত্রী বেশে ছিনতাইকারীদল মুরাদ হাসান নামের একযাত্রীকে ছুরিকাঘাত করে সর্বস্ব ছিনতাই করেছে। রাত ১২টায় পটিয়া থানায় ভিকটিমের পিতা আবদুল মালেক বিষয়টি জানান। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইকবাল হোসেন মনসা বাদামতল থেকে সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। তিনি ইন্দ্রপুল গন্তব্যস্থল থানার মোড় নেমে যাওয়ার আগে তার দুই পাশে যাত্রীবেশে বসা কয়েক যুবক তাকে ছুরি ধরে বাইপাস সড়কে নিয়ে যায়। তার সাথে থাকা সব কিছু নিয়ে তাকে কমলমুন্সির হাট এলাকায় চলন্ত গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
পটিয়ায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত আবদুর রহমান নামের এক যুবক গত ৫/৬ মাস পূর্বে ডিউটি শেষে প্রতিদিনের মত চন্দনাইশে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। পটিয়া উপজেলা গেট থেকে তিনি একটি সিএনজি অটোরিকশায় ওঠার পর সিএনজিতে যাত্রীবেশে আরো তিন ছিনতাইকারী তার দুইপাশে বসে পড়ে। রাত ৯টার দিকে তাকে বহনকারী অটোরিকশাটি মহাসড়কের ফকিরপাড়া রাস্তার মাথায় পৌঁছালে দুইদিক থেকে তাকে ছুরি ধরা হয়। এ সময় তার সাথে ছিনতাইকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করে তার কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিলে তার হাত ভেঙে যায়।
জানা যায়, পটিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মির্জা বাড়ীর আবদুল মালেকের পুত্র হাসান মুরাদ চট্টগ্রাম শহরের নিউমার্কেটের সন্নিকটে এস. আলম ফিলিং স্টেশনে ক্যাশিয়ার পদে চাকুরি করেন। রাত্রিকালীন ডিউটি করার জন্য হাসান মুরাদ পটিয়া পৌরসভার মুন্সেফ বাজারস্থ মহাসড়কের খাজা বেকারির সামনে থেকে রাত ৯টায় একটি সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। এই সিএনজিতে আরও ৪ জন যাত্রী ছিল। মহাসড়কের পটিয়া গৈড়লার টেক স্থানে পৌঁছালে সামনে বসা যাত্রীটি পিছনে চলে এসে ৩ জন যাত্রী হাসান মুরাদকে গলা চেপে ধরে। এই সময় তার হাতে থাকা মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়। টাকা দাবি করলে হাসান মুরাদ মানি বাগ বের না করলে ছিনতাইকারীদের একজন হাসান মুরাদের মাথায় চাকু দিয়ে আঘাত করে। এতে ভয়ে হাসান মুরাদ তার মানি ব্যাগ বের করে দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় হাসান মুরাদকে শাহ্গদী মার্কেটের সন্নিকটে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। হাসান মুরাদ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় বাড়িতে খবর দিলে তার পিতা আবদুল মালেকসহ বাড়ির লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসান মুরাদের পিতা আবদুল মালেক জানান, রাত ১২টায় আমি পটিয়া থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে ঘটনাটি জানানোর পর তিনি আমার ও আমার ছেলের নাম, ঠিকানা লিখে আমাকে চলে যেতে বলেন। ছিনতাই কারীরা আমার ছেলের মানি ব্যাগে থাকা ১১ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ভুক্তভোগীরা জানান, এসব ঘটনার সাথে সিএনজি অটোরিকশার চালকরাও জড়িত। যাত্রীরা সড়কে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে চলাচলরত গাড়ি ও চালকের পরিচয় নিবন্ধন করে রাখা অত্যাবশ্যক বলে জরুরি পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে পটিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার জানান, কোনো ভুক্তভোগী এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে প্রশাসনিকভাবে আমরা ব্যবস্থা নিব। তবে এ চক্রটির বিষয়ে প্রশাসনের কাছে কোনও তথ্য নেই বলেও জানান তিনি।