পটিয়ায় বালু মহালের ইজারার স্থানে পরিমাপ করে মিলল একটি গ্রাম। আর ওই দাগে বালু মহাল ইজারা নিয়ে ভিন্ন মৌজা থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পাচার করছিল ইজারাদার। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনা দেখা দেয় গ্রামের লোকজন ও ইজারাদারের লোকজনের মাঝে। গত শুক্রবার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ঘটনাস্থলে গিয়ে গতকাল রোববার পর্যন্ত মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর গতকাল ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে কানুনগো মৃদুল শশী চাকমা ও সার্ভেয়ার সোহেল রানাসহ সংশ্লিষ্টরা কার্যাদেশে উল্লেখিত ইজারাকৃত দাগ সমূহ পরিমাপ করেন। এ সময় তারা এসব দাগে বাড়িঘর ও একটি মরা খালের অস্তিত্ব দেখতে পান। এরপরই মাটি কাটা স্থায়ীভাবে বন্ধের আদেশ দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পটিয়ায় বালু মহালের বদলে একটি গ্রাম ও কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছিল ইজারাদারসহ বালুখেকোরা।
পারিগ্রামের বাসিন্দারা জানান, ওই গ্রাম রক্ষায় গত কয়েক বছর আগে শ্রীমাই খালের আর.এস সিট মোতাবেক পটিয়া আসনের এমপি সামশুল হক চৌধুরী মূল খাল খনন করেন। এর ফলে পারিগ্রামের অবশিষ্ট বসতি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়। আসন্ন বাংলা অর্থ বছরের জন্য পারিগ্রামের একই মৌজায় একটি খালের ইজারা দেয় জেলা প্রশাসকের দপ্তর। কিন্তু ইজারাদার কার্যাদেশ মোতাবেক বিএস দাগ থেকে বালু উত্তোলন না করে বাহুলী মৌজাস্থ শ্রীমাই খাল ও পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিল। গ্রামের বাসিন্দা বাবুল বিশ্বাস বলেন, এমপি সামশুল হক মূল খাল খনন করার ফলে আমাদের পারিগ্রাম নামক গ্রামটি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়।
দীপক সূত্রধর জানান, শ্রীমাই খালের পানির ঢলে পারিগ্রামটি প্রায় ৯০ ভাগ বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর আগে পটিয়া আসনের এমপি মূল খাল খনন করে গ্রামটি রক্ষায় বাঁধ দেয়ায় গ্রামের অবশিষ্ট অংশ রক্ষা পায় এবং হারিয়ে যাওয়া জমিগুলো পলিতে ভরাট হওয়ায় ফেরত পেতে শুরু করেন জমির মালিকরা। কিন্তু পটিয়া উপজেলা ভূমি অফিস থেকে প্রবাহমান খাল দেখিয়ে পারিগ্রাম ও লট শ্রীমাই ৭৫ মৌজার বিএস মতে উল্লিখিত দাগে মোট ১১.০৩ একর খালের ইজারা দেয়া হয়। কিন্তু তাতে মনগড়া চৌহদ্দী উল্লেখ করা হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত স্থান থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে পাচার করছে। কার্যাদেশ মোতাবেক এস্কেবেটর ব্যবহারেরও কোনও সুযোগ নেই।
উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার সোহেল রানা জানান, তারা গতকাল রবিবার সরেজমিন সার্ভে করেছেন। এ সময় ইজারাকৃত দাগ সমূহ মানুষের বাড়িঘর ও মরা খাল দেখতে পান। উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগগো মৃদুল শশী চাকমা জানান, ইজারাকৃত দাগ সমূহে প্রবাহমান কোনও খাল নেই। সেখানে বাড়ি ঘর রয়েছে। এ কারণে সেখানে ইজারা দেয়ার কোনও যৌক্তকতা নেই।
এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার রাকিবুল ইসলাম জানান, পারিগ্রাম মৌজায় ইজারাকৃত খালের অবস্থান গতবার প্রস্তাব প্রেরণের আগে আর যাচাই করা হয়নি। আগে ওই দাগের উপর ইজারা দেয়া হতো। কিন্তু গত বেশ কয়েক বছর ধরে ওই দাগ সমূহে কেউ ইজারা দরপত্র দাখিল করেনি। চলতি বছর ইজারার জন্য আগের প্রতিবেদন অনুসরণ করে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। পানির প্রবাহ না থাকলে ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই।