পটিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নিয়ে নগরীর লালখান বাজারে একটি রেস্টুরেন্টে সমঝোতা বৈঠকে বসেন জেলা আওয়ামী লীগের পটিয়ার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু বৈঠক ব্যর্থ হয়। বৈঠক শেষে চলে যাওয়ার সময় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লালখান বাজার পিটস্টপ রেস্টুরেন্টের দক্ষিণ গেটে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম বদি এবং মহানগর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম দিদারের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
বৈঠকে উপস্থিত দক্ষিণ জেলার দুজন নেতা জানান, পটিয়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউল আলম বদি, দিদারুল আলম দিদার এবং পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদকে নিয়ে বিকাল ৪টায় লালখান বাজারে একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠকে বসেন পটিয়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামানসহ জেলা আওয়ামী লীগের ১১ জন সিনিয়র নেতা। তবে বৈঠকে অপর দুই প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ দাশ এবং শ্রমিক লীগ নেতা নুরুল আবসার উপস্থিত ছিলেন না।
আজ রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। প্রত্যাহারের আগের দিন একক প্রার্থী নির্ধারণের জন্য স্থানীয় এমপির উপস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগের পটিয়ার নেতৃবৃন্দ এই বৈঠক করেন। একক প্রার্থীর বিষয়ে কেউ কাউকে ছাড় না দেওয়ায় বৈঠকে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। যার ফলে সমঝোতা বৈঠক ব্যর্থ হয়। তবে বৈঠকে এক প্রার্থীর বিষয়ে অন্য প্রার্থীর বিষোদগার করা যাবে না, শান্তিপূর্ণভাবে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রচারাভিযানে অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বিরুদ্ধচারণ করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বৈঠক শেষে সংসদ সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা সবাই চলে গেলে রেস্টুরেন্টের দক্ষিণ গেটে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউল আলম বদি ও দিদারুল আলম দিদারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দুই নেতা বলেন, বৈঠক শেষে পিটস্টপের সামনে বদিউল আলম ও দিদারুল আলমের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দিদারুল আলম থাপ্পড় মারেন বদিউল আলমকে। পরে বদিউল আলম তার এক অনুসারীকে নিয়ে দিদারুল আলমকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। ঘটনার সময় দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আইয়ুব আলী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মোহাম্মদ ফারুক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোজাহেরুল আলম চৌধুরী ও নাছির উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা এগিয়ে গিয়ে দুজনকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন বলেন উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়।
খবরটি ছড়িয়ে পড়ার পর চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদারের অনুসারী যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতাকর্মী সেখানে মারমুখী অবস্থান নেন। পরে অবশ্য সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান প্রার্থী বদিউল আলম বদি আজাদীকে বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। দিদারুল আলম আমার দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলায় স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া করে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়।
হাতাহাতির বিষয়টি অস্বীকার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিদারুল আলম দিদার আজাদীকে বলেন, বৈঠক শেষে বদিউল আলম বদি দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গালমন্দ করে যাচ্ছিলেন। আমি এর প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকেও গালিগালাজ করতে থাকেন। এতে সামান্য হটটক ও গালমন্দের ঘটনা ঘটলেও কোনো হাতাহাতি কিংবা মারামারির ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে জানতে পটিয়ার এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাছির উদ্দিন বলেন, বদিউল আলম সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গালমন্দ করায় দিদারুল আলম তাদের কেন গালমন্দ করছেন জানতে চাইলে বদিউল আলম ‘তুমি কে’ বলে ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা পড়েন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি, উত্তেজনা এবং হটটক হয়। পরে অবশ্য কয়েকজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তাদের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন করেন।