চট্টগ্রাম বন্দরে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা কোটি কোটি টাকার মূল্যের সেই বিলাসবহুল ১১৩ গাড়ি পঞ্চমবারের মতো নিলামে তোলা হচ্ছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- জার্মানি, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের তৈরি বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ বেঞ্জ, ল্যান্ড ক্রুইজার, ল্যান্ড রোভার, জাগুয়ার, মিতসুবিশি, টয়োটা এবং লেক্সাস জিপের মতো বিলাসবহুল গাড়ি। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনায় আগামী ৩ ও ৪ নভেম্বর ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) এবং ম্যানুয়াল নিলামে গাড়িগুলো বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বার নিলামে তুলেও প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় প্রতিবারই নিলাম বাতিল করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, কার্নেট সুবিধার আওতায় এখন পর্যন্ত ২৪৩টি গাড়ি আমদানি হয়। এর মধ্যে ১২১টি গাড়ি আমদানিকারকরা খালাস করে নিয়ে যায়। এছাড়া বাকি ১২২টি গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ি কাস্টমসের নথিতে উল্লেখ থাকলেও কন্টেনার নাম্বার না থাকায় গাড়ির অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি কাস্টমস। কার্নেট সুবিধার গাড়িগুলো গত ২০১০-২০১১ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়ে আছে। ইনভেন্ট্রি করে প্রথম দফায় গত ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি, দ্বিতীয়বার ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি, তৃতীয়বার ২০১৮ সালের মে মাসে ১১১টি গাড়ি এবং সর্বশেষ গত ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল চতুর্থবারের মতো ২২টি গাড়ি তোলা হয়। কিন্তু প্রতিবারই দামে অসামঞ্জস্য থাকায় দরদাতাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
নিলাম শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ গত ২০১৯ সালের নিলামে মার্সিডিস বেঞ্জ ব্র্যান্ডের মতো হাইপ্রোফাইল গাড়ির দাম উঠে মাত্র সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা এবং লেক্সাস জিপের দর উঠেছিল ২ লাখ ৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় গাড়িগুলো পড়ে থাকার কারণে ইঞ্জিনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের সেলফ টাইমও ফুরিয়ে আসছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-এই মূহূর্তে অকশন শেডের জন্য এসব গাড়ি বোঝার মতো। তাই এসব গাড়ির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হলে অকশন শেডের জায়গাও খালি হবে।
নিলামের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ আল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, অনলাইন ও ম্যানুয়াল দুই মাধ্যমেই ১১৩টি গাড়ি নিলামে তোলা হচ্ছে। বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) গাড়ি পরিদর্শনে এবার ৫দিন সময় দেয়া হচ্ছে। বিডাররা চাইলে অনলাইন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হলেও বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে সিপি (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) নেয়া সাপেক্ষে খালাসের অনুমতি দেয়া হবে। কারণ আমদানি নীতি আদেশের শর্ত অনুযায়ী গাড়ির তৈরির সন থেকে আমদানির ৫ বছর পেরিয়ে গেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সিপি নিতে হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্নেট সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। তবে নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেগুলো ফিরিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে যারা শুল্কমুক্ত এই সুবিধা ব্যবহার করে এসব গাড়ি এনেছেন তাদের বেশির ভাগই প্রবাসী বাংলাদেশী, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই এসব গাড়ি কার্নেট সুবিধায় এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই এসব গাড়ি আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলে একসময় আমদানিকারকরা গাড়িগুলো খালাস করে নেননি।












