পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নতুন সরকারের যাত্রা শুরু

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছেন তিনি। তার নতুন মন্ত্রিপরিষদে ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। এর মধ্যে ১৪ জন নতুন মুখ। নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ায় ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি গঠিত পুরনো সরকারের দায়িত্ব শেষ হল।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন ও গোপনীয়তার শপথ নেন। প্রধানমন্ত্রী শপথ নেওয়ার পর রাষ্ট্রপতি তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা পর্যায়ক্রমে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।

গতকাল শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পঞ্চম মেয়াদ শুরু করলেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে ইতোমধ্যে ২০ বছর তিনি পেরিয়ে এসেছেন। আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বের নারী রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বেশি দিন সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। পরে তারা দরবার হলে প্রবেশ করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে সরকারপ্রধানের এক পাশে ছিলেন শেখ রেহানা, অন্যপাশে ছিলেন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রেবেকা সুলতানা। শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও ছিলেন প্রথম সারিতে। জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান উপস্থিত ছিলেন শপথ অনুষ্ঠানে। একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে শপথ অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপসও ছিলেন অতিথি সারিতে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতাদের মধ্যে ভোটে জয় পাওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, ভোটে হেরে যাওয়া জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া এসেছিলেন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানে। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে ভোটে জয়ী সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, হেরে যাওয়া তার ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকীও এসেছিলেন। আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর চাচা শেখ কবীর হোসেন ও চাচাতো ভাই শেখ হেলাল শপথ অনুষ্ঠানে ছিলেন। বিদায়ী সরকারের যারা নতুন মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি তাদের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদকে অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান, তৌফিকইলাহী চৌধুরী এবং সালমান এফ রহমানও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেঙান্ডার মন্টিটাস্কি, ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় ভার্মা, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বিচারপতি, দেশের তিন বাহিনী প্রধান, আইনজীবী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন বঙ্গভবনের দরবার হলে।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শুরুর পর শপথগ্রহণ মঞ্চে ওঠেন শেখ হাসিনা। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। এরপর শপথ গ্রহণের জন্য ২৫ জন মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রীকে দুই ধাপে শপথ মঞ্চে আহ্বান করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি। সবাই শপথ নেওয়ার পর শপথ বইয়ে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শপথগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। এরপর অনুষ্ঠানের সমাপনী টানেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

শপথ অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গভবনের মাঠে চা চক্রে যোগ দেন সবাই। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলেন।

রেকর্ড পঞ্চম মেয়াদ : শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান দুই বোন হাসিনা ও রেহানা। পরের ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তার সেই সরকারের অন্যতম সাফল্য হিসেবে পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির কথা বলা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে বিএনপিজামায়াত জোট সরকার গঠন করলে তৃতীয়বারের মতো বিরোধী দলীয় নেত্রী হন শেখ হাসিনা। ওই সরকারের সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়, তাতে ২৩১টি আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ। সেই সরকারের মেয়াদ শেষে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব দলই অংশ নেয়। ২৫৭টি আসন জিতে আবার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২২২টি আসনে জয় পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পায় ৬২ আসনে। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি করে আসন পায়। একটি আসনে জয় পায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। বুধবার ২৯৮ জন সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছ থেকে শপথ নেন। সেদিনই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকে কোন দপ্তর পেলেন
পরবর্তী নিবন্ধহাটহাজারীতে পাগলা কুকুরের কামড়ে নারী ও শিশুসহ আহত ১১