নৌপথে কন্টেনার পরিবহনে বন্দর কর্তৃপক্ষের সুযোগ

বন্যা পরিস্থিতিতে পানগাঁও টার্মিনাল থেকে খালাস নিতে পারবেন আমদানিকারকরা

হাসান আকবর | সোমবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় চট্টগ্রামঢাকা মহাসড়ক ও রেলপথ বন্ধ রয়েছে। কোনোভাবে চলছে না কোনো ধরনের পরিবহনও। এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে কোথাও কোনো পণ্য পরিবহন হচ্ছে না। এতে বন্দরে বাড়ছে কন্টেনার জট। বন্দরে ঢাকার কমলাপুরস্থ আইসিডিগামী কন্টেনারের সংখ্যাই শুধু বাড়ছে না, একই সাথে ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন আমদানিকারকের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসতব্য কন্টেনারেরও পাহাড় সৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতোপূর্বে আইসিডিগামী কন্টেনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করার অনুমোদন দেয়া হলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় তাতে খুব একটা সুফল এখনো মিলেনি। বিদ্যমান সংকটের মাঝে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল এক চিঠি দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসতব্য কন্টেনার ঢাকার পানগাঁও টার্মিনাল থেকে খালাস, ইনল্যান্ড ভ্যাসেলের মাধ্যমে কন্টেনার নৌ পথে পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এই ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে নৌপথে এসব কন্টেনার ঢাকার পানগাঁও টার্মিনালে নেয়া এবং ওখান থেকে ডেলিভারি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ঢাকা অঞ্চলের কন্টেনারের জন্য প্রয়োজনে চট্টগ্রামপানগাঁও রুটে চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হবে বলে বন্দর সচিব জানান।

বন্দর সূত্র জানায়, কোটা সংস্কার ইস্যু এবং পরবর্তী গণঅভ্যুত্থানের প্রভাব পড়ে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে। দেশব্যাপী রাজপথ এবং রেলপথ বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়ে পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ক। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেনারের পাহাড় গড়ে উঠে। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার রাখার জায়গার সংকট না হলেও খালি জায়গাগুলোতে বাড়তি কন্টেনার রাখার ফলে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ৫৩ হাজার ১৮ টিইইউএস কন্টেনার রাখার জায়গা রয়েছে। তবে বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে ৩০/৩১ হাজার টিইইউএস কন্টেনার থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক অচলাবস্থায় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ৪৪ হাজার টিইইউএসে উন্নীত হয়েছিল। এই কন্টেনার জট সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ এবং বেসরকারি আইসিডিগুলোতে পুরোদমে কাজ শুরু হওয়ায় বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। গতকাল ইয়ার্ডে কন্টেনারের সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৯৯৬ টিইইউএস। এটিও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।

তবে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে আইসিডিমুখী কন্টেনারের ক্ষেত্রে। চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ঢাকার আইসিডিগামী কন্টেনারের ধারণক্ষমতা ৮৭৬ টিইইউএস। কিন্তু গতকাল সেখানে কন্টেনার ছিল ২২০১ টিইইউএস। রেল চলাচল বন্ধ থাকায় আইসিডিগামী কন্টেনারের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বন্দর সূত্র জানায়, আইসিডিগামী কন্টেনারের এই চাপ সামলানোর জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহায়তা চাইলে তারা এসব কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকেও খালাস করার অনুমোদন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু এই সার্কুলার জারি হলেও ভয়াবহ বন্যায় রাজপথ এবং রেলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকেও এসব কন্টেনার খালাস করে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অপরদিকে ঢাকা অঞ্চলের যেসব কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করে সড়কপথে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হতো সেগুলো পরিবহনও বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে ঢাকা অঞ্চলের কন্টেনারের বিশাল এক পাহাড় তৈরি হয় চট্টগ্রাম বন্দরে।

পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গতকাল এই নতুন সার্কুলার জারি করে। এতে ঢাকা অঞ্চলের যেসব কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করার কথা ছিল সেগুলো আমদানিকারকেরা ইচ্ছা করলে নৌপথ ব্যবহার করে ঢাকার পানগাঁও টার্মিনাল থেকে খালাস করতে পারবেন।

সার্কুলারে বলা হয়, বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে আমদানি রপ্তানিকারকগণ চট্টগ্রামঢাকাচট্টগ্রাম সড়কপথ ও রেলপথে পণ্যবাহী কন্টেনার পরিবহন অনেকক্ষেত্রেই শ্লথ ও বন্ধ রাখতে বাধ্য হতে হচ্ছে। উদ্ভূত কারণে দেশের আমদানিরপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় এনে চট্টগ্রামঢাকাচট্টগ্রাম নৌপথ ব্যবহার করে দেশের আমদানিরপ্তানি বেগবান করতে পানগাঁওস্থ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করা যাচ্ছে। এব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সার্বিক সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে বলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠিতে উল্লেখ করে। বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানির পর্যাপ্ত ইনল্যান্ড জাহাজ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সকল ধরনের লজিস্টিকস সুবিধাদি এই কার্যক্রমের জন্য সার্বিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

চিঠিতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ সকল আমদানিরপ্তানিকারকগণকে আমদানিরপ্তানি পণ্যবাহী কন্টেনার পানগাঁও আইসিটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর হতে সংগ্রহজাহাজীকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছে।

গতকাল এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক আজাদীকে বলেন, বন্যার কারণে মহাসড়ক এবং রেলপথ বন্ধ থাকায় ঢাকা অঞ্চলের অনেকেই কন্টেনার খালাস করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আমরা এসব কন্টেনার ঢাকার পানগাঁও টার্মিনাল থেকে খালাসের কথা বলেছি। আমদানিকারকেরা যদি এসব কন্টেনার ঢাকা থেকে খালাস করার ব্যবস্থা করেন তাহলে ইনল্যান্ড ভ্যাসেলের মাধ্যমে তারা তা পানগাঁও নিয়ে যেতে পারবেন। আমরা জাহাজের সংখ্যা বাড়ানোসহ সব ধরনের সাপোর্ট দেবো। এখন সপ্তাহে দুইটি ইনল্যান্ড ভ্যাসেল চট্টগ্রামপানগাঁও রুটে চলাচল করে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা চারটি করা হবে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের নতুন এই ঘোষণায় ঢাকা অঞ্চলের আটকে থাকা কন্টেনার খালাসে গতিশীলতা আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্যার প্রভাবে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পণ্য পরিবহনে ধস
পরবর্তী নিবন্ধবন্যার্তদের পাশে আজাদী