নৈরাজ্য প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে সমাজকেও

| বুধবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসে নি। সাম্প্রতিক সময়ে গণপিটুনির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নাগরিক জীবনে অস্থিরতা ও উদ্বেগ বাড়ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সাত মাসে দেশে গণপিটুনির অন্তত ১১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এতে ১১৯ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হন। গণপিটুনির সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটলো টাঙ্গাইলের সখীপুরে জহিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার মাধ্যমে। এদিকে রাজধানীতে এখন জনআতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। দিনে কিংবা রাতে পাড়ামহল্লায় প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া, হামলামারধর, চুরিছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে গ্যাংয়ের সদস্যরা।

ডিএমপির তথ্যমতে, এই ৭ মাসে তাদের দ্বারা রাজধানীতে এক হাজারের বেশি অপরাধ সংঘটিত হয়েছেযার মধ্যে মোহাম্মদপুর এবং আদাবর এলাকায় ৩৬৮টি। গত ১ সপ্তাহে বিভিন্ন এলাকায় ১০টি ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর সঙ্গে কিশোর গ্যাং সরাসরি সম্পৃক্ত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সারা দেশে ২৩৭টির মতো কিশোর গ্যাং রয়েছেযার মধ্যে রাজধানীতে ১২৭টি, যার সদস্য ১ হাজার ৩৮২ জন। তাদের বড় একটা অংশ প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবারের কিশোর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘গণপিটুনি এবং কিশোর গ্যাং সমস্যার মধ্যে একটি অদৃশ্য সেতুবন্ধ রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জনতা যখন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তখনই গণপিটুনির মতো ভয়ংকর চিত্র সামনে আসে। আবার গণপিটুনির দৃষ্টান্ত দেখে কিশোরদের মনে ভয় বা সংশোধনের পরিবর্তে প্রতিশোধপরায়ণতা জন্ম নেয়। ফলে দুটো ঘটনাই সমাজকে আরও অনিরাপদ করে তোলে। এক কথায়, গণপিটুনি ও কিশোর গ্যাং উভয়ই সমাজে অনিয়ন্ত্রিত সহিংসতার বাস্তব রূপ। শিগগির রোধ করা না গেলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়তে পারে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে। সমাজের জন্যও ভয়ংকর অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই সচেতন হতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অপরাধীদের সঠিক পথে ফেরাতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। প্রথমে এসব অপরাধের উত্থানের কারণগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।’

অনেকের অভিযোগ, এদেশে একটি গোষ্ঠীর কোনো কোনো অমানবিক আচরণ মানবতা ও শান্তির ধর্ম ইসলামকে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সামনে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এতে ইসলাম ধর্মকে গভীরভাবে না জানা বক্তাদের দায় যেমন রয়েছে, তেমনইভাবে দায় রয়েছে নানা মতাদর্শে বিভক্ত আলেম এবং রাজনৈতিকভাবে সুবিধা লাভ করার মানসিকতায় থাকা ব্যক্তিদের। বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তৈরি হওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরুর পর্যায়ে কেন যে উগ্রপন্থি কোনো কোনো গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। স্বৈরাচারের নানা আবর্জনা সরাতে ব্যস্ত থাকায় এবং সম্ভবত জরুরি অনেক বিষয়ে সরকারের তেমন প্রতিক্রিয়া না থাকায় মনে হচ্ছে, এখন যেন সব পক্ষ ওয়াকওভার পেয়ে গেছে। অনেক বেশি স্বাধীন হয়ে গেছে যেন সবাই। এরই একটি কুৎসিত প্রতিফলন ঘটেছে।’

একথা অস্বীকার করা যায় না যে, ইদানীং মবের দৌরাত্ম্য কমছে না। যে কেউ মবের শিকার হচ্ছে। কেউ হচ্ছে নাজেহাল, কেউ অপদস্থ আবার কেউ লাঞ্ছিত হচ্ছে। কোনও প্রতিকার নেই, কোনো প্রতিরোধও নেই। সবাই যেন নির্বিকার। কারো যেন কিছুু করার নেই। শুধু অপমান আর লাঞ্ছনা নয় কেউ কেউ মবের হাতে গণপিটুনির শিকার হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রামে সালিশের মাধ্যমেও ছোট খাট বিচার আচার হয়ে থাকে। কিন্তু জোর জবরদস্তি জুতার মালা পরিয়ে দেয়ার নাম বিচার না, অবিচার। এটা বড় ধরনের অপরাধ, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিবেকবান কেউ এ ধরনের অপরাধকে সমর্থন করতে পারে না। নিশ্চুপ না থেকে সবার এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে এ অপরাধ প্রবণতা বাড়তে থাকবে, বেরিয়ে আসা যাবে না। সবকিছু এর ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকবে। মবতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’

বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা, দীর্ঘসূত্রতা, পুলিশের অনুপস্থিতি কিংবা আইন প্রয়োগে ব্যর্থতাএসবই মব সৃষ্টিকারীদের উত্তেজিত করে তোলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব অপরাধ দমনে রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা সমন্বিত হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো দ্রুত বিচার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি সমাজের মানুষকেও তৈরি হতে হবে এসব নৈরাজ্য প্রতিহত করতে। এগিয়ে আসতে হবে প্রতিরোধে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে