চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ধরা পড়া ৫০ কোটি টাকা দামের প্রায় ৪ কেজি কোকেন চট্টগ্রামকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে পাঠানো হচ্ছিল ভিন্ন দেশে। নাইজেরিয়ার একটি চক্র বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে এই কোকেন পাচারের সাথে জড়িত। কোকেন আটকের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা থেকে নাইজেরিয়ার দুই নাগরিককে আটক করা হয়েছে। আরো কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তা উচ্চ পর্যায়ের টিম তদন্ত করে দেখছে। ঘটনার ব্যাপারে পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে পুরো চক্রটিকে গ্রেপ্তার এবং কোকেনের গন্তব্য বের করা হবে। কোকেনের উৎস দেশ ব্রাজিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে ঢাকার বদলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার নগরীর আইস ফ্যাক্টরি রোডে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রায় চার কেজি কোকেনের এ চালান দেশের সর্ববৃহৎ কোকেনের চালান। এর সাথে দুই নাইজেরিয়ান জড়িত থাকার আলামত পাওয়া গেছে। ওই দুজন ঢাকায় থাকেন। গ্রেপ্তারকৃত বাহামা নারীর সাথে হোয়াটসঅ্যাপে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। আমরা দুই নাইজেরিয়ানকে আটক করেছি। পতেঙ্গা থানায় রুজুকৃত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে এই চক্রের অন্য সদস্যদের আইনের আওতায় আনা হবে। শাহ আমানত বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার বাহামা দ্বীপপুঞ্জের নাগরিক স্টিলা সান্তাই পেশায় একজন সেলসম্যান। সেলসম্যান থেকে কোকেন চোরাচালানের সাথে জড়িয়েছেন অবিবাহিত স্টিলা।
স্টিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, মাদক বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে আমাদের জানিয়েছেন। তার দাবি অনুযায়ী, চিকিৎসার জন্য একটি চক্র কাগজপত্র স্বাক্ষর করাতে তাকে বাংলাদেশে আসতে বলেছিল। এ সময় তারা তাকে একটি বাঙ দিয়ে সেটি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে বলে। তাই সেটি তিনি নিয়ে এসেছেন।
খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে কোকেন ব্যবহারকারী মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোটায়। এ কারণে দেশে কোকেনের চাহিদাও নেই। এখন আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারীরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এখান থেকে তারা ইউরোপ, আমেরিকাসহ অন্যান্য উন্নত দেশে কোকেন পাচার করে।
তিনি বলেন, স্টিলা বাংলাদেশে এসেছেন ব্রাজিলের সাও পাওলো বিমানবন্দর হয়ে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে প্রথমে দুবাই, সেখানে থেকে ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম আসেন। অনলাইনের মাধ্যমে নগরীর আগ্রাবাদের একটি হোটেলে উঠেন এবং একইভাবে বিলও পরিশোধ করা হয়।
৩ কেজি ৯০০ গ্রামের কোকেন জব্দের এ ঘটনায় নগরীর পতেঙ্গা থানায় একটি মামলার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উচ্চ পর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল ও ঢাকার এপিবিএনের একটি টিম যৌথভাবে ১২ জুলাই থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে কোকেন বাহক স্টিলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এর মধ্যে ১৩ জুলাই সকাল ৮টায় স্টিলা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দুবাই থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং কোনো ব্যাগেজ ছাড়া তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করে চট্টগ্রামের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। বিমানবন্দরে অবতরণ করা থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিকভাবে তাকে নজরদারিতে রাখা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ জুলাই তিনি বিমানবন্দরে তার ব্যাগেজ ক্লেইম করার পরে রেইডিং টিমের সদস্যরা কাস্টমস হাউজের সহযোগিতায় তার ব্যাগটি স্ক্যান করেন। পরে ব্যাগ তল্লাশি করে একটি কার্টুনের ভেতর সাতটি আয়তকার পলি প্যাকেটের মধ্যে সাদা বর্ণের উক্ত কোকেন আটক করা হয়।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক কোকেন চোরা চালানকারী বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বহিনীকে এড়ানোর জন্য ঢাকার বিমান বন্দরের পরিবর্তে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর বেছে নিয়েছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সান্তাইয়ের সাথে থাকা লাগেজ ট্যাগ, বোর্ডিং কার্ড, পাসপোর্ট এবং একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তার লাগেজ স্ক্যানিং করার সময় মাদকের কোনো নমুনা শনাক্ত হয়নি। তখন লাগেজ খোলা হয়। দেখা যায়, লাগেজের মধ্যে একটি আইপিএস। সেই আইপিএসের মধ্যে একটি কার্টন, যার ভেতরে সাতটি পলিব্যাগ। প্রতি ব্যাগে ৫শ থেকে ৬শ গ্রাম করে সাদা বর্ণের কোকেনসদৃশ বস্তু ধরা পড়ে। পরে রাসায়নিক পরীক্ষা করলে কোকেন নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোকেন ‘ক’ শ্রেণীর মাদক উল্লেখ করে বলা হয়, কোকেন চোরাচালানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি ঢাকায় ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনসহ বিদেশি ৬ জন ও বাংলাদেশি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান তিনি।