সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দেড় হাজার মানুষের বাস। কিন্তু নিজ মাতৃভাষায় পড়ালেখার কোনো সুযোগ নেই তাদের। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব ভাষা। মায়ের ভাষা যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য নিজ ভাষাতে পাঠ্যপুস্তক প্রদানসহ শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনগণ।
উপজেলা পরিসংখ্যান কার্যালয় সূত্র জানায়, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন, পৌরসভা, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারী ও ছলিমপুর ইউনিয়নের পাহাড়ে প্রায় ৯৭৩ জন ত্রিপুরা, ১৫০ জন চাকমা, ১৫০ জন মারমা এবং অন্য নৃগোষ্ঠীর ১৭০ জন মানুষ বসবাস করছে।
সীতাকুণ্ড দত্তবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমন ও বাসন্তি ত্রিপুরা বলেন, আগে আমাদের ভাষায় সবাই কথা বলতো। এখন ধীরে ধীরে এর প্রচলন কমে আসছে। নিজের ভাষা ধরে রাখতে আমরা নিজ ভাষায় পড়ালেখা করতে চাই। আমাদের নিজ ভাষায় কথা বলতে চাই। এই স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিতে ২৫ জনের মতো আদিবাসী ত্রিপুরা শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছি। বাড়িতে নিজেদের ভাষায় কথা বললেও স্কুলে বাংলা ভাষায় কথা বলতে হয়। আমাদের নিজেদের ভাষার কোনো বই বা শিক্ষক না থাকায় ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো ভাষা বুঝতে পারে না। তাই স্কুলেও আসতে চায় না। আমাদের নিজ ভাষায় বই ও পড়ানোর শিক্ষক থাকলে খুব ভালো হতো। আমরা ভালো মতো বুঝে শুনে পড়তে পারতাম। আমাদের সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা আরও শিক্ষিত হতো।
কুমিরা আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের নেতা রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দেড় হাজার আদিবাসী মানুষের বাস। এখন অনেক আদিবাসী শিশু পড়ালেখা করলেও স্কুল–কলেজে আমাদের নিজ মাতৃভাষায় পড়ালেখার সুযোগ নেই। যার জন্য আমাদের এই ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আদিবাসীদের যে নিজস্ব ভাষা রয়েছে সেটি অনেকেই জানে না। তাই আদিবাসী শিশুদের জন্য স্কুল–কলেজে নিজ ভাষায় বই ও শিক্ষকের ব্যবস্থা থাকলে এসব ভাষা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যেত।
সীতাকুণ্ড আদিবাসী ফোরামের নেতা ও দক্ষিণ সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, এখানে পাহাড়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০ পরিবারের বসবাস। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের পর এখানে দক্ষিণ সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সবাই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী হলেও শিক্ষা কার্যক্রম চলে বাংলা ভাষায়। ত্রিপুরা পরিবারের সন্তানদের নিজেদের ভাষায় পড়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা বাড়িতে নিজেদের ভাষায় কথা বললেও স্কুলে কথা বলতে হয় বাংলা ভাষায়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরেচ্ছোফা বলেন, সীতাকুণ্ডে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অনেক ছাত্র–ছাত্রী পড়ালেখা করলেও তাদের ভাষার কোনো বই নেই। এ বিষয়ে স্কুল–কলেজে শিক্ষকও নেই। এ নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও কোনো চাহিদা নেই। তাদের কাছ থেকে চাহিদা পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের জন্য নিজ মাতৃভাষায় পাঠ্য পুস্তক প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।