নীহাররঞ্জন রায় (১৯০৩–১৯৮১)। বাঙালি বহুশাস্ত্রজ্ঞদের মধ্যে অন্যতম একজন। জ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন– শিল্পকলা, প্রাচীন ও আধুনিক সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি এবং জীবনকাহিনীসহ নানা বিষয়ে ছিলো তাঁর অবাধ বিচরণ। বহু গ্রন্থ রচনা করেন। শিল্প–ইতিহাস চর্চায় তিনি প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। নীহাররঞ্জন রায় ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় ন্যাশনাল স্কুলে। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ স্নাতক এবং ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে এম.এ পাস করেন। এ বছরেই তিনি ‘মৃণালিনী স্বর্ণপদক’ পান। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস’ প্রাচীনকাল থেকে মুসলিম শাসনের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের বাঙালির ইতিহাসের একটি সুবিশাল গ্রন্থ। পঁয়ত্রিশ বছরেরও অধিককাল নীহাররঞ্জন রায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন রিসার্চ ফেলো, প্রভাষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপত্র ক্যালকাটা রিভিউ–এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, মুখ্য গ্রন্থাগারিক, রিডার ও প্রফেসর। তিনি সাংবাদিকতা পেশার সাথেও যুক্ত ছিলেন। সুভাষ বসুর ইংরেজি দৈনিক লিবার্টির সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপনা দিয়ে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে শিল্পকলা বিষয়ে রানী বাগেশ্বরী অধ্যাপক পদে বৃত হন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে অবসর গ্রহণের পর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাকে প্রফেসর এমিরেটস করা হয়। সিমলায় প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক হয়ে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। ইউনেস্কো–এর প্রতিনিধিরূপে ব্রহ্মদেশ সরকারের সংস্কৃতি ও ইতিহাস–বিষয়ক উপদেশক ছিলেন ১৯৭৩–৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে লাইব্রেরি অ্যাসোশিয়েশন অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল সোসাইটি অফ আর্টস, লন্ডন; ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন অফ আর্টস, জুরিখ; এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা‘র ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ কেেরন।