নিয়োগবিধি চূড়ান্ত হয়নি ১১ বছরেও

জনবলের অভাবে কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার শংকা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৫ মে, ২০২১ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে দ্রুত জনবল নিয়োগ দেয়া না হলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে একজন রাসায়নিক পরীক্ষক দিয়েই চলছে কাস্টমস ল্যাব। ওই পরীক্ষক আবার আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবসরে চলে যাবেন। এদিকে গত ১১ বছর ধরেই একক নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণের কাজটি ঝুলে আছে। ফলে নতুন করে ল্যাবের জন্য জনবল নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া নিয়মিতভাবে আমদানিকৃত বিভিন্ন ফলের ফরমালিনের পরীক্ষাও করতে হচ্ছে। নতুন জনবল নিয়োগের আগে ফরমালিন পরীক্ষা বন্ধ রাখা এবং দ্রুত নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান বরাবর সম্প্রতি চিঠি লিখেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, কাজের পরিধি বাড়ার ফলে গত ২০০৯ সালে কাস্টমসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারে জনবল বৃদ্ধি এবং পদের আপগ্রেডেশনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ৪টি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেয়। শর্ত সমূহের অধিকাংশ ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। শুধুমাত্র নিয়োগবিধি সংশোধনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এনবিআরের অধীন নন ক্যাডার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর জন্য একটি একক নিয়োগবিধি তৈরি করে প্রেরণের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে এনবিআরকে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও একক নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণের এই কাজটি এখনও সমাপ্ত হয়নি। ফলে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। বর্তমানে মাত্র একজন রাসায়নিক পরীক্ষক পরীক্ষাগারে কর্মরত, যার অবসরে যাওয়ার সময় আছে মাত্র ৯ মাস। নিয়োগবিধি দ্রুত চূড়ান্ত করে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়া না হলে পরীক্ষাগারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সরকার বিরাট অংকের অপঘোষণাজনিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া জনবলের অভাবে রাসায়নিক পরীক্ষাগারের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্যের চালান খালাসও বিলম্বিত হচ্ছে। অপরদিকে বর্তমানে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে আসা বিভিন্ন নমুনার বিপরীতে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ অপঘোষণা শনাক্ত হয়। ফলে মিথ্যা ঘোষণা উদঘাটনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব এই পরীক্ষাগারের মাধ্যমে আহরিত হয়। রাসায়নিক পরীক্ষাগারের জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপিত হলে আরও অধিক সংখ্যক নমুনা এই পরীক্ষাগারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। ফলে আরও অধিক সংখ্যক শনাক্তের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। তাই দ্রুত নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণের অনুরোধ করা হলো।
এদিকে চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করা হয়। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১০০টি চালানের বিপরীতে আমদানিকৃত ফলের নমুনা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে। ফলের এই অসংখ্য নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে দিনের অর্ধেক সময় চলে যাচ্ছে। ফলের ফরমালিন পরীক্ষা ছাড়ও অন্যান্য পণ্যের বিপরীতেও প্রতিদিন ৫০টির অধিক নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়। ফলে মাত্র একজন পরীক্ষক দিয়ে অধিক সংখ্যক পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা করতে গিয়ে চালান খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। আবার দেখা যায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফলমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। যদিও ফরমালিন পরীক্ষার শুরুর দিকে কয়েকটি চালানে ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।
বন্দরের সেবাগ্রহীতারা জানান, সময়ের সাথে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে অথচ কাস্টম হাউজের ল্যাবটি চলছে সেই মান্ধাতা আমলের যন্ত্রপাতি দিয়ে। ল্যাবে জনবলের অভাবে একদিনে যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা, তা শেষ হতে এক সপ্তাহও লেগে যাচ্ছে। আবার অনেক পরীক্ষার জন্য ঢাকার উপর নির্ভর করতে হয়। কাস্টমসের ল্যাবটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব হলে দ্রুত পণ্য খালাস হতো। এখন শুধুমাত্র নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য ব্যবসায়ীদের সময়ক্ষেপণ হয় এবং ব্যবসায়ীদের পোর্ট ডেমারেজ দিতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিয়োগবিধি চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে কাস্টমসে ল্যাবে জনবল নিয়োগের বিষয়ে এনবিআরে চিঠি লিখা হয়েছে। কারণ এখন মাত্র একজন রাসায়নিক পরীক্ষক দিয়েই ল্যাব চলছে। ওনি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অবসরে চলে যাবেন। তাই এই সময়ের মধ্যে জনবল নিয়োগের মাধ্যমে ল্যাবকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা না হলে রাসায়নিক পরীক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলএনজি পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে আগস্টে
পরবর্তী নিবন্ধশ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জয়ের হাতছানি