নিয়ম নেই তবুও…

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪১ পূর্বাহ্ণ

কালুরঘাট সেতু দিয়ে স্থানীয় এমপি পার হবেন, তাই বন্ধ রাখা হয় একপাশের যান চলাচল। সেতুর পূর্ব প্রান্তে (বোয়ালখালী অংশে) শতশত যানবাহন ও মানুষের ভিড়ের মাঝে সিএনজি টেক্সিতে আটকে ছিল দগ্ধ এক শিশু। আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিশুটিকে নেয়া হচ্ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। উপস্থিত জনতা ও স্বজনদের কাকুতি-মিনতি সত্ত্বেও পার হতে পারল না দগ্ধ শিশুটিকে বহনকারী সিএনজি টেক্সিটি। সকাল সাড়ে দশটা তখন। এমপি সেতু পার হলেন ১১.৪৫ মিনিটে। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে দগ্ধ শিশুটিকে জ্বালা পোড়া শরীর নিয়ে কাতরাতে হয় ওই স্থানেই। গত ১৭ জানুয়ারি রোববার এ ঘটনাটি ঘটে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করেন চট্টগ্রাম ৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দীন। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা খুবই অমানবিক ও দুঃখজনক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে শিশু কন্যা তানজিলার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তাঁর নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার একটি প্রতিনিধি দল ঐ শিশুর বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে দশ হাজার টাকা তুলে দেন তার পিতার হাতে। সাংসদ মোছলেম উদ্দিন সংসদে ব্যস্ত থাকায় তিনি স্থানীয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. নুরুল আমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দলকে তানজিলার সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখার নির্দেশ দেন।
তবে এটিই একমাত্র ঘটনা নয়, বিভিন্ন সময় দেখা যায়, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেই অতি উৎসাহী কিছু পুলিশ বা সরকারি অন্য কর্মচারি সাধারণের চলাচলের পথ বন্ধ করে সেই ব্যক্তিকে পার করে দেন। দেখা যায় আটকে রাখা গাড়ি বহরে আটকা পড়েছে এ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও।
এ প্রসঙ্গে সিএমপির নগর বিশেষ শাখার উপ পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ আজাদীকে বলেন, ‘এরকম কোন নিয়ম নেই। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে অনেক সময় নিরাপত্তার কারণে কাজটা করতে হয়। কিন্তু যদি দেখা যায়, আটকে থাকা গাড়ির মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আছে, অথবা যদি জানা যায় যে আটকে থাকা গাড়ির মধ্যে কোন অসুস্থ ব্যক্তি আছে তবে তাকে পার করে দেওয়াটাই প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব। আমাদের কমিশনার স্যার (সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর) এ ব্যাপারে কঠোর ইন্সট্রাকশন দিয়েছেন। সবার আগে মানবতা। অনেক সময় অতি উৎসাহী কর্তব্যরত কেউ কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটায়।’
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা হলে তারা এককথায় জানালেন, এটা অমানবিক একটা ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) কথা প্রসঙ্গে জানান, সার্জেন্ট থাকাকালীন ওয়াসার মোড়ে একবার কমিশনার স্যারের গাড়ি আটকে দিয়েছিলাম রোগীবাহী একটা অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। কমিশনার স্যার পরে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। অপর এক সার্জেন্ট জানান নতুন ব্রিজে ভূমিমন্ত্রী জাভেদ সাহেবের গাড়ি দু’দুবার আটকে রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম শুধুমাত্র যানজট তীব্র থাকার কারণে। তিনি বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন। কালুরঘাট সেতুতে যে ঘটনাটি ঘটেছে , সেটি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।
তবে বাস্তবতা হলো অতি উৎসাহী কিছু মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা নিজেদের সেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কাছে ভালো সাজার চেষ্টায় শতশত গাড়িকে দাঁড় করিয়ে রেখে ঐ গাড়ি চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। এতে যে আটকে থাকা গাড়ির যাত্রী সাধারণ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহান তা তারা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন।
গত রোববারের ঘটনাটি প্রসঙ্গে বোয়ালখালী থানার ওসি মো. আবদুল করিম আজাদীকে বলেন, ঘটনাটা দু:খজনক। তবে কালুরঘাট সেতুর দুর্ভোগ নিয়ে সকলেই অবগত আছেন। এখানে এক সাইড বন্ধ রেখে অন্য সাইডের গাড়ি আসার সুযোগ করে দিতে হয়। এমনটা হয়নি যে এমপি আসছেন বলে দুই সাইড বন্ধ রাখা হয়েছে। আর আমাদের আইজিপি স্যার নিজেই বলেছেন, কোন সন্তানসম্ভবা নারী, দুর্ঘটনাজনিত কেউ কিংবা আইসিইউতে ভর্তি করাতে হবে এমন রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পার করে দেওয়াটা নৈতিক দায়িত্ব। আমরা সেটা পালন করার চেষ্টা করে থাকি মানবিকতার দিক থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআজ নয়, ভারত থেকে টিকা আসছে কাল
পরবর্তী নিবন্ধ৩০ লাখ স্বাক্ষর সংগ্রহ করে জাতিসংঘে পাঠাবে নির্মূল কমিটি