পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে গতকাল শুক্রবার থেকে সারা দেশে একযোগে পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। এর পরিবর্তে পাট, কাপড়ের ব্যাগ বা পরিবেশবান্ধব ব্যাগ ব্যবহার করতে বলা হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চট্টগ্রাম নগরে সর্বত্র অবাধে হচ্ছে পলিথিনের ব্যবহার। থেমে নেই এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ। গতকাল নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভ্রাম্যমাণ দোকান কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার দেখা যায়। পাইকারি বিক্রেতারা পলিথিনের ব্যাগ বিক্রি করছেন। নিষিদ্ধের বিষয়টি জানলেও তেমন আমলে নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরাও। অন্যদিকে পলিথিন ছাড়া যেন কিছু কেনা কল্পনাই করা যায় না। ক্রেতারা বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে বাজারে না যাওয়ায় দোকানিকে বাধ্য হয়ে ব্যাগ দিতে হয়। আর সেটি পলিথিন ব্যাগ। পলিথিন ছাড়া বিকল্প কোনো কিছুতে কিনতে ক্রেতাদেরও চরম অনীহা দেখা গেছে। এ নিয়ে প্রশাসনেরও তেমন তদারকি চোখে পড়েনি। তবে শীঘ্রই পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে। এর আগে গত ১ অক্টোবর সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহার বর্জন করতে নির্দেশনা দেয় সরকার। কিন্তু সেটিও পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। গত দুই মাসে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে এক হাজার কেজির বেশি পলিথিন জব্দ এবং আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। তবু থেমে নেই এর ব্যবহার।
জানা যায়, মাঠ পর্যায়ে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে এরই মধ্যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে হাটবাজার ও কারখানায় অভিযান চালানো হবে। এসব বিষয় কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটর করবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটি। এর আগে ২০০২ সালে সরকার আইন করে সাধারণ পলিথিনের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করলেও মাঠ পর্যায়ে আইনটির বাস্তবায়ন করা যায়নি। অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে বিগত বছরে পলিথিনের ব্যাগ পরিবেশের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল, নালা–নর্দমায় পলিথিনের স্তূপের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্লাস্টিক ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় তিন হাজার কারখানায় প্লাস্টিক ও পলিথিন তৈরি হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যাগ উৎপাদন হয়। বাজার মনিটরিং ও বিকল্প–দুটিকেই গুরুত্ব দিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমপ্রতি বলেছেন, আগেও পলিথিন বন্ধের উদ্যোগ অনেকখানি সফল হয়েছিল শুধু বাজার মনিটরিংয়ের কারণে। পলিথিনের বিকল্প নিয়েও কাজ চলছে। তবে দেশে সব সময়ই পলিথিনের সুস্পষ্ট বিকল্প ছিল। এখন পাট, কাপড় ও কাগজকে বিকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে।
নগরের বিভিন্ন মুদি ও কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে অবাধে চলছে পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার। গ্রাহক ও দোকানি অনেকেই জানেন না পলিথিন ব্যাগ যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে কাউকে বাসা থেকে ব্যাগ আনতে দেখা যায়নি। সবাই দোকান থেকে দেওয়া পলিথিনের ব্যাগে বাজার করতে দেখা গেছে। দোকানদাররা জানান, সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করেছে শুনেছি। কিন্তু মানতে কাউকে দেখছি না। বাজারে অনেকে ব্যাগ নিয়ে আসে না। প্রায় সবাই খালি হাতে বাজারে চলে আসে, এখন ব্যাগ না দিলে কাস্টমার অন্য দোকানে চলে যায়। যার কারণে বাধ্য হয়ে দিতেই হয়। এছাড়া সবাই আগের মত পলিথিনে বেচাকেনা করছে। অভিযান করতেও কেউ আসেনি। কয়েকজন ক্রেতা জানান, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে এর সরবরাহ আগে পুরোপুরি বন্ধ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পলিথিন নিয়ে শীঘ্রই মাঠে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম নগরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরিন সৌরভ। তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা আজ (শুক্রবার) বিভিন্ন জায়গায় পলিথিন বর্জন করার জন্য ক্যাম্পেইন করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি। মানুষদের সতর্ক করেছি। যাতে পরে কেউ বলতে না পারে যে আমরা এটা জানতাম না। এছাড়া বাজার ব্যবসায়ী এবং দোকানদারসহ প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে আমরা স্টেকহোল্ডার বৈঠক করেছি। সবাইকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে আমরা অভিযানে যাব। তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যে পরিমাণ পলিথিন ব্যবহার হয়েছে এর আগের ৮০ বছরেও এই পরিমাণ পলিথিন ব্যবহার হয়নি। তার মানে দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে পলিথিনের ব্যবহার। আমাদের সচেতন হতে হবে। বিকল্প ব্যবহারে প্রথম প্রথম কষ্ট হবে পরে ঠিক হয়ে যাবে। আমরা বাজার ঘুরে পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ ব্যবহার করতে বিক্রেতাদের চেয়ে ক্রেতাদের বেশি অনীহা লক্ষ্য করেছি। নানাভাবে পলিথিনের বিকল্প তৈরি করার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।