চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলাম কার্যক্রমের গতি বাড়লেও এর পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেন না বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারী)। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার জট নিরসনে মিথ্যা ঘোষণার আটক এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অখালাসকৃত পণ্য নিলামে তুলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত দুই বছর ধরে প্রতি মাসে কাস্টমসে অন্তত দুটি করে নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যথাসময়ে সর্বোচ্চ দরদাতাদের অনূকুলে বিক্রয় অনুমোদনও দেয়া হচ্ছে। তবে আইনগত জটিলতার কারণে অনেক সময় পণ্য শেষ মূহূর্তে খালাস নিতে পারছেন না বিডাররা। বিডাররা বলছেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ সময়ই নিলামে পণ্য তোলার সময় কোনো মামলা আছে কিনা খতিয়ে দেখে না। কিন্তু পণ্য অনুমোদন পেয়ে খালাস পর্যায়ে দেখা যায়, আমদানিকারকের মামলা রয়েছে। তখন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত পণ্য খালাস প্রক্রিয়াও ঝুঁলে যায়। অন্যদিকে পণ্যের সংরক্ষিত মূল্যেও রয়েছে বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে বিস্তর ফারাক। ফলে একই পণ্য বারবার উঠানো হলেও সেগুলোতে বিডারদের কোনো আগ্রহ থাকছে না।
নিলাম শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক সময় নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে, ‘সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ’ কমিটির বৈঠক করা হতো না। এখন পণ্য নিলামে তোলার আগেই বৈঠকে মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শুল্কায়ন শাখা থেকে মূল্য নিয়ে ক্যাটালগে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া পরবর্তীতে নিলাম কমিটি যাছাই বাছাই শেষে পণ্যের সংরক্ষিত মূল্য উল্লেখ করে ক্যাটালগ প্রকাশ করে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিলাম কার্যক্রমে গতি বেড়েছে এটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেটি খুব বেশি ফলপ্রসু হচ্ছে না। পণ্যের সংরক্ষিত মূল্য নিয়ে বেশিরভাগ বিডারদের আপত্তি থাকে। দেখা যায়, যে পণ্যের বর্তমান বাজারমূল্য ১০০ টাকা সেটি নিলামের ক্যাটালগে সংরক্ষিত মূল্য ধরা ১৫০ টাকা। একটি নির্দিষ্ট সময় পণ্য পড়ে থাকলে তার কিছু অবচয় থাকে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি বিবেচনায় আনেন না। এতে একাধিকবার নিলামে তোলার পরেও পণ্য বিক্রি করতে পারছে কাস্টমস। এছাড়া আরেকটি সমস্যা হলো-কোনো একটি পণ্য সর্বোচ্চ দরদাতার অনূকুলে বিক্রয় অনুমোদন দেয়ার পর সেই পণ্যে আগে থেকেই আমদানিকারকের মামলা রয়েছে। এক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই পণ্য খালাসের সুযোগ থাকে না। এছাড়া বিডারদের পে-অর্ডারও আটকে যায়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে নিলাম শাখার সদ্য সাবেক উপ-কমিশনার মো. আল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিলামের পণ্য ক্যাটালগভুক্ত করার সময় মামলা আছে কিনা সেটি যাছাই বাছাই করা হয়। অনেক সময় দীর্ঘ সময় মামলা চলা পণ্যও নিলামে তোলা হয়। এক্ষেত্রে ক্যাটালগে বলা হয়, মামলা নিষ্পত্তি সাপেক্ষে পণ্য খালাস করা যাবে। তবে সমস্যা হচ্ছে, অনেক সময় আমদানিকারক পণ্য নেয় না, কিন্তু যেই মাত্র নিলামে তোলা হয়, তখন আমদানিকারক মামলা করে দেন। এক্ষেত্রে বিডাররদের আমরা বিক্রয় অনুমোদন দেয়ার পরেও পণ্য দিতে পারি না।