চল্লিশের দশকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে যাঁরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সঙ্গীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী। গণনাট্য আন্দোলন ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা কবি, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান পরিবেশন করে গণসঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত শিল্পী হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। হয়ে ওঠেন গণনাট্য আন্দোলন সিলেটের মধ্যমণি।
নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্ম ১৯২১ সালে সুনামগঞ্জের সুখাইর গ্রামে। শৈশব থেকেই গানের প্রতি অনুরাগ। সঙ্গীতানুরাগী বাবা-মা চাইতেন ছেলে শিল্পী হয়ে উঠুক। তাঁদের কাছেই নির্মলেন্দু গান শেখার প্রেরণা পান। লোকসঙ্গীতের সুর তাঁকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করতো। তন্ময় হয়ে শুনতেন নদীতে নৌকা বেয়ে চলা মাঝির গান। নির্মলেন্দু চৌধুরী গানে প্রাথমিক তালিম নিয়েছেন ময়মনসিংহের খ্যাতিমান শিল্পী আবদুল মজিদ ও আবদুর রহিমের কাছে। এঁদের কাছে তিনি দোতারা বাজানো শেখেন। পরবর্তী সময়ে শান্তিনিকেতনে অশোকবিজয় রাহার কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীতে তালিম নেন। রবীন্দ্র ভারতীতে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। গাইতেন নিপীড়িত মানুষের মুক্তির গান। পল্লীগীতি অর্থাৎ মাটির এই গানকে আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। ওয়ারশতে আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত সম্মেলনে লোকগীতি পরিবেশন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন নির্মলেন্দু চৌধুরী।
ছায়াছবিতে নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। লং প্লে রেকর্ডে তিনি পরিচালনা করেন ‘মলুয়া’ গীতিনাট্য। ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা’ নামে একটি গ্রন্থ রয়েছে তাঁর। ভারত সরকার তাঁকে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৮১ সালের ১৮ এপ্রিল প্রয়াত হন শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী।