নির্বাচনে সবাই আসুক সেটাই চাই : প্রধানমন্ত্রী

স্বনামধন্যদের অর্থপাচারের তথ্য আছে ভারত থেকে খালি হাতে ফিরিনি

| বৃহস্পতিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে কি না, সময় গড়ালেই তা স্পষ্ট হবে বলে মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সব দলই নির্বাচনে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, যদি কেউ অংশ না নেয়, সেটা যার যার দলের ব্যাপার। ভারত সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ, অর্থ পাচারসহ অনেক বিষয়ের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গও আসে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
একজন সাংবাদিক সেখানে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট জাতীয় পার্টির নেতারা বেসুরে বাজছেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ মহাজোটগত থেকে, নাকি এককভাবে বা ১৪ দলীয় জোট থেকে নির্বাচন করবে? উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এখনও নির্বাচনের এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। সময় যত যাবে, ততই তো জিনিসটা স্পষ্ট হবে। আর আমাদের সাথে কে থাকবে, আর না থাকবে, বা নতুন জোট হবে, বা কী হবে… অসুবিধা নেই তো। সবাই ইলেকশনে পার্টিসিপেট করুক, সেটাই আমরা চাই। আর যদি কেউ না করে, এটা যার যার দলের সিদ্ধান্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের ধারা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। দীর্ঘ একটানা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে তো গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত আছে। তবে অতীতে যারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী জোটে ছিল, তারা আগামীতেও থাকবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। আর তাতে তার আপত্তিও নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এত কাজ করার পরে জনগণের যে ভোট, অবশ্যই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে, তা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। যদি এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান। না চাইলে তো কিছু করার নাই। সেটা জনগণের ইচ্ছা। ভারত সফর প্রসঙ্গ : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে বাংলাদেশ কী পেয়েছে- সেই প্রশ্ন যারা করেন, তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, শূন্য হাতে তিনি ফেরেননি। তিনি বলেন, কী পেলাম, এই প্রশ্নটা খুব আপেক্ষিক। এটা আপনার নিজের ওপর নির্ভর করছে, আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যে ভৌগলিক অবস্থা, চারিদিকে ভারত, একটুখানি মিয়ানমার, তারপর বে অব বেঙ্গল। বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ সব বিষয়ে সহযোগিতাটা আমরা পাই। নুমালিগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল নিয়ে আসছি। সেই লাইনটা কিন্তু ভারত নির্মাণ করে দিচ্ছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপোতে এই তেলটা থাকবে। উত্তরবঙ্গে আর সুদূর চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ি হয়ে তেল যেতে হবে না। রিফাইন করা তেল ওখান থেকেই আসবে। অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আরও বাড়বে। উত্তর বঙ্গের মঙ্গা আমরা দূর করেছি। পাশাপাশি ভারত থেকে এলএনজি আমদানির ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে খুলনা অঞ্চলের জন্য যেন এলএনজি পেতে পারি সেই আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে হয় না যে একেবারে শূন্য হাতে ফিরে এসেছি।
ভারতের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত উদারতা পেয়েছেন কিনা এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যথেষ্ট আন্তরিকতা আমি পেয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য যার যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের আন্তরিকতা সবসময় ছিল, আছে। আপনারা জানেন, একটা বিষয়, বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দল-মত এক থাকে। এটা হল বড় কথা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভারত সফরের বেশ কিছু অর্জনের কথা তুলে ধরেন। অর্জনগুলো হলো : ১. কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত। ২. সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। ৩. ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে। ৪. চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দিতে ভারত সরকার পদক্ষেপ নেবে। ৫. বাংলাদেশের মুজিবনগর থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ঐতিহাসিক স্বাধীনতা সড়ক চালু করা হবে। ৬. নদী দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ৭. রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করা হবে। ৮. ২০২২ সালের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি নিয়ে দু’দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থপাচার প্রসঙ্গ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশে অর্থপাচারে জড়িত স্বনামধন্য অনেকের তথ্যই তার কাছে আছে এবং দুদক বিষয়গুলো দেখছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক স্বনামধন্যদের ব্যাপারেও আমার কাছে আছে। তবে হ্যাঁ, আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ব্যাংকের ওখান থেকে খবর নেওয়া হচ্ছে। আসবে, সামনে একদিন আসবে। সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা করা বাংলাদেশিদের তথ্যের বিষয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সুইস ব্যাংকে বহু আগেই আমাদের ডিমান্ড পাঠিয়েছিলাম। তালিকা চেয়েছিলাম। কোনো তালিকা আসে নাই। কেউ বলতে পারে নাই। সবাই বলে যায়, হাওয়ায় বলে যায়, কিন্তু সঠিক তথ্য দিয়ে বলতে পারে না। এটা একটা সমস্যা।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ : মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে ভারতের সহযোগিতা চেয়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বর্তমান সময়ে যেই প্রসঙ্গটা আপনি উল্লেখ করলেন রোহিঙ্গাদের সংকট সমাধান, এখন আমাদের জন্য একটা বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গা। এবার ভারত সফরকালে আপনি উল্লেখ করেছেন, আপনি সেখানে আলোচনা করলেন। এই ক্ষেত্রে ভারতের মনোভাব কী ছিল? উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধন্যবাদ। এই ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। ভারতও এটা মনে করে, তারা উপলব্ধি করে যে, আমাদের এখানে রোহিঙ্গাদের এই দীর্ঘদিন অবস্থান, এটা দীর্ঘ একটা সংকট সৃষ্টি করছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষ শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ায় পরিবেশের ক্ষতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট হচ্ছে, পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সব থেকে বড় কথা যে, ওদের নিজেদের ভেতরে নিজেদের দ্বন্দ্ব এবং যার ফলে এখানে নানা ধরনের যেমন ড্রাগ, ট্রাফিকিং বা নিজেদের মধ্যে অস্ত্র, সংঘাত, খুনোখুনি নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা আরও পরিবেশটাকে নষ্ট করছে। শেখ হাসিনা বলেন, তবুও আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করছি আর ভারতকে আমরা এটা বলেছি যে, তারা যেন এই ব্যাপারে একটু সহযোগিতা করে। এবং তাদের সাড়াটা পেয়েছি ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেছে মিয়ানমারের সরকারকে নিয়ে। এদের যেখান থেকে যতই চাপ দিক, এরা তো কোনো ব্যাপারে ইয়ে (সাড়া দেয় না) করে না। আর তারা নিজেরাই তো নিজেদের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত রয়ে গেছে। এখানেই বড় সমস্যা। সরকার প্রধান বলেন, কিন্তু ভারত সব সময়ই এটা মনে করে যে, না এটা সমাধান হওয়া উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসএসসি শুরু আজ
পরবর্তী নিবন্ধচার খালে ১৩ ভাঙন