দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রথম তিনিই ফরম নেন। এর মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলো টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় দলটির। সকালে কার্যালয়ে পৌঁছে দোতলায় স্থাপিত ঢাকা বিভাগের বুথ থেকে ৫০ হাজার টাকায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন শেখ হাসিনা। প্রথম দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ১০৭৪ জন। এর মধ্যে সরাসরি ফরম সংগ্রহ করেন ১ হাজার ৬০ জন। বাকি ১৪ জন অনলাইনে।
শেখ হাসিনার পক্ষে গোপালগঞ্জ–৩ আসনের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদ আলী খান, সাধারণ সম্পাদক বিএম সাহাবুউদ্দিন আজম ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাজী আকরামসহ গোপালগঞ্জ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন শেখ হাসিনা। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গতকাল দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে বলেছেন, শুধুমাত্র ভোট এবং নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা চাই জনগণের ভোটাধিকার অব্যাহত থাকুক এবং ভোটের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হতে পারে। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের। নির্বাচন বানচালের জন্য যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের প্রতিহত করতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। সুতরাং যারা সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বানচালের চেষ্টা করছে তাদের সম্পর্কে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি যেসব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, যেসব রাজনৈতিক দলের জনগণের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নেই এবং রাজনৈতিক দল হিসেবে সুসংগঠিত নয়, তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। নির্বাচন বানচাল একটি দেশের জন্য চরম ক্ষতির কারণ হতে পারে।
২০১৩ এবং ২০১৪ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের কারণে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে জীবন ও সম্পত্তি ধ্বংস করা কোন ধরনের রাজনীতি?
২০০৯ সাল থেকে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রের এই ধারাবাহিকতার কারণে অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক অগ্রগতি এবং উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন সম্ভব হয়েছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যার মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে তাদের প্রতিহত করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি দেশের জনগণকে তাদের প্রতিহত করার জন্য অনুরোধ করব।
হরতাল–অবরোধের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরিবেশ ও কর্মকাণ্ড ধ্বংস করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি–জামায়াত জনগণের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আমোদ–ফূর্তি করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। কেউ যদি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে এবং অগ্নিসন্ত্রাস চালিয়ে যায়, তাহলে তা তাদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেওয়া জনগণের অধিকার। দেশের জনগণ তাদের শাস্তি দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশাল সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত দেশের অব্যাহত গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করতে না দিতে আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাব।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, যারা জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং সেই উদ্দেশে অগ্নিসন্ত্রাস চালাবে তাদের জনগণ প্রতিহত করবে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা মনোনয়ন ফরম নিচ্ছেন, তারা সবাই যোগ্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আগামী নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাজ। প্রার্থী বাছাইয়ের আগে আমরা তৃণমূল পর্যায় থেকেও মতামত নেব।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রির জন্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আটটি বিভাগের জন্য ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। দলীয় প্রার্থীরা ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে ২১ নভেম্বর প্রতিদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। এবার প্রথমবারের মতো অনলাইনেও মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দেওয়ার সুযোগ রেখেছে আওয়ামী লীগ। এর আগে গণভবন থেকে প্রাইভেট কারে চড়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন শেখ হাসিনা। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে সরকারি গাড়িতে করে বঙ্গভবনে যান তিনি।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ : রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গতকাল সকালে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিম ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম এবং সৌদি আরবে সাম্প্রতিক সফরসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্রাসেলস ও জেদ্দা সফর সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদনও রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করেন।