চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী প্রচার এখন তুঙ্গে। গতানুগতিক প্রচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা কৌশল। মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট ও সভার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা। তবে প্রায় সব প্রার্থীর প্রচারেই যুক্ত হয়েছে ‘নির্বাচনী গান’। গানের মাধ্যমে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। ভোটের মাঠে হরেক রকম সুর। স্লোগানে মিলছে ছড়ার ছন্দ। পরিচিত গানের কলি কানে ভাসছে ‘নির্বাচনের সুরে’। এতে বিনোদন পাচ্ছেন কর্মী-ভোটার সবাই। বেলা দুইটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত শহরের অলি-গলি ছাপিয়ে মাইকে ভেসে আসছে ছন্দময় স্লোগান।
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে যেসব গান বাজছে তার মধ্যে ‘জয় বাংলা, জিতবে আবার নৌকা / শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’ অন্যতম। এই গানটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের থিম সং হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের প্রচারণায় স্থান পাওয়া উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে হল- ‘ও আমার দাদি গো, ও আমার নানি গো, ও আমার ভাবি গো, শোনেন চাচি-খালা, সবার চাইতে আমার রেজাউল করিম ভাই যে ভালা, রেজাউল করিম ভাই সবার চাইতে ভালা।’ ‘ ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের। রেজাউল ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা।’
এছাড়াও বাজছে ‘চাটগাঁবাসীর মনের ভাষা বুঝতে পারেন শেখ হাসিনা, জনগণের মনের ভাষা বুঝতে পারেন শেখ হাসিনা/নগর পিতা নির্বাচনে প্রার্থী রেজাউল ভাই, রেজাউল ভাইয়ের নৌকা মার্কায় ভোট দিবো সবাই। চল যাই চল যাই…।’ ‘আসবে আবার শুভ দিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। রেজাউল ভাইয়ের সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। উন্নয়নের শপথ নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন। দক্ষ দেখে পক্ষ নিন, রেজাউল ভাইকে ভোট দিন।’,‘শুনেন আমার খালা গো, নৌকা মার্কা ভালা গো, শুনেন আমার মামি গো, নৌকা মার্কা দামি গো। রেজাউল ভাইয়ের দুই নয়ন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন।’
অপরদিকে বিএনপি ও অন্যান্য প্রার্থীও নিজেদের মতো করে নির্বাচনী গান তৈরি করেছেন। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের প্রচারণায় প্রচারিত গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ভাই বোন মুরুব্বিগণ সকলের ভোট চাই, মেয়র হওয়ার যোগ্য প্রার্থী প্রাণের শাহাদাত ভাই। চট্টগ্রামে শাহাদাত ভাইয়ের নাই তুলনা নাই’, ‘খুশির খবর আজ বলি গানে, চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী শাহাদাত ভাইয়ের তুলনা যে নাই, শাহাদাত ভাইয়ের ধানের শীষে সবার ভোট চাই।’‘এসে গেছে নির্বাচন ভোট দাও জনগণ, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তোমাদের প্রয়োজন। শাহাদাত ভাইয়ের সালাম নিন, ধানের শীষে ভোট দিন।’
কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরাও কম যান না। একটি স্লোগান বেশ জনপ্রিয় হয়েছে, ‘ ভোট দিবা ভাই ফাল মারি/ মার্কা আঁরার ঠেলাগাড়ি’। যানজটে আটকে পড়া মানুষের প্রশান্তি হতে পারে এমন সব নির্বাচনী গানও রয়েছে। ‘মায়ের কোলে শিশুর হাসি/অমুক ভাইকে ভালোবাসি’, কিংবা ‘অমুক ভাইয়ের সুন্দর মন/শান্তি পাবে জনগণ’।
কিছু ছড়া আবার প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর পক্ষেই শোনা যাচ্ছে। ‘আমরা সবাই এক জোট/নৌকা মার্কায় দিব ভোট’, কিংবা ‘ধানের শীষে দিলে ভোট/শান্তি পাবে দেশের লোক’। কখনো অসামপ্রদায়িক চেতনার স্লোগান ‘হিন্দু-মুসলিম বাঁধল জোট, অমুক মার্কায় দেবে ভোট’।
কথায় কথায় ছড়া কাটা চাটগাঁবাসীর পুরোনো রেওয়াজ। কালের বিবর্তনে সেই রেওয়াজ ধীরে ধীরে উঠে গেলেও নির্বাচনের মতো কোনো উপলক্ষ এলে তা আবার চাঙা হয়ে ওঠে। এসব ছড়া কিংবা ছন্দে বাঁধা স্লোগান দিয়ে বোঝা যায় না মানুষের মতিগতি।
এসব মাইকিং অনেকের কাছেই শব্দ দূষণ মনে হলেও অনেকেই উপভোগ করছে। রেয়াজউদ্দিন বাজারের দোকান কর্মচারী আবুল কালাম জানান, ভোট মানে উৎসব। তাই নির্বাচনে মাইক ছাড়া কি চলে? এই তো কটা দিন। এমন উৎসব তো আর সারা বছর থাকে না। নির্বাচনের এসব প্রচারণা ও স্লোগান মুখরিত গান বাজনা উৎসবের সাথেই হয়ে থাকে। নিউ মনসুরাবাদের হাসেম বলেন, নানান গানে প্রার্থীদের প্রচার শুনতে বেশ ভালোই লাগে। অনেকদিন পর এসব গান বাজছে নগরীতে। তবে অনেকেই বিষয়টিকে শব্দদূষণ হিসেবেই দেখছে। বিভিন্ন গানের সঙ্গে প্রতীক উল্লেখ করে ভোট চাওয়া এসব মাইকের যন্ত্রণায় পথচারীরা ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না। বিশেষ করে রাস্তায় বের হলে কোনো পথচারী মোবাইল ফোনে ঠিকমতো কথা বলতেও পারছেন না, আবার শুনতেও পারছেন না। আবার রাস্তার ধারে দোকান হওয়ায় ক্রেতার কথাও ঠিকমতো শোনা যাচ্ছে না মাইকের শব্দে। সে জন্যই বুঝি হেমসেন লেইনের বাসিন্দা পারভেজ আলম মজা করেই বললেন, ‘আঁর ভোট আঁই দিয়ুম/ কেয়ারে কিছু ন কইয়ুম’।