বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকদের মাতামাতি যখন ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে, তখন বিপরীত পথেই হাঁটছে চীন। দেশটির রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আবারও বললেন, নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এতে চীনের হস্তক্ষেপ করার কোনো কারণ নেই।
আর কয়েক মাস পরই বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের দেশগুলোর নানা তৎপরতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার মধ্যেই চীনের রাষ্ট্রদূত এক সপ্তাহ আগে বলেছিলেন, চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। বাংলাদেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে, আগামীতে কাকে ক্ষমতায় আনবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। খবর বিডিনিউজের।
নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না– সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, চীন কখনোই কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে চীন। নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চীন এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রতিমন্ত্রী খালিদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বটা তারা আরও বেশি এগিয়ে নিতে চায়, আমরাও চাই। আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা খুবই পরিষ্কার। আমরা চাই, বাংলাদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে যে দেশ কারা পরিচালনা কে করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাই চান।
প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মংলা বন্দরের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বন্দরকে কেন্দ্র করে অনেক সম্ভাবনা দেখছেন তারা। বৈদ্যুতিক যান উৎপাদনে বিশ্বে আমরাই সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। কাজেই আমরা কেন মংলা বন্দরে বৈদ্যুতিক ও ব্যাটারি প্ল্যান্ট স্থাপন করব না? আইসিটি, সৌর বিদ্যুৎ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণেও বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারবে চীন। আম, কাঁঠালসহ বাংলাদেশ বিপুল ফল উৎপাদিত হয় বলে এখানে ফল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে সহায়তার আগ্রহও দেখান চীনা রাষ্ট্রদূত। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ছাড়াও শিল্প ও তৈরি পোশাকখাতে চীন বিনিয়োগ করতে চায় বলে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ জানিয়েছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তারা (চীন) যে ভূমিকা রাখছে, যেভাবে সহযোগিতা করছে, তা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে। মংলা বন্দরের আধুনিকায়নে তারা একটি প্রকল্প দিয়েছেন। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের শিল্পের ক্ষেত্রে তারা বিনিয়োগ করতে চায়। কৃষি শিল্প, তৈরি পোশাক খাতে তারা ভূমিকা রাখতে চায়।
নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের শিপিং লাইনে তাদের কাছ থেকে জাহাজ নিয়েছি। আরও চারটি চুক্তির পর্যায়ে আছে। এগুলো দ্রুত করার বিষয়ে কথা হয়েছে। যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মসৃণ হয়। চীনের বিনিয়োগ কমে গেছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এনিয়ে এক কোনো আলোচনা হয়েছে কি না– সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, চীনের বিনিয়োগ কমে গেছে, না বেড়ে গেছে তা বড় কথা না। কথা হচ্ছে, আমাদের প্রকল্পগুলো ঠিকমতো চলছে কি না? আমরা দেখছি, চীনের যেখানে বিনিয়োগ আছে, সেখানে প্রকল্পগুলো ঠিকমতো চলছে। পৃথিবীর সংকটে মধ্যেও আমরা উন্নয়ন সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।