আগামী জাতীয় নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সূচি প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করেছেন, তা স্পষ্ট হয়নি বিএনপির কাছে। বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং তার প্রেস সচিবের দেওয়া বক্তব্য সাংঘর্ষিক। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান। এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। খবর বিডিনিউজের।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। আমি মনে করি যে, এখন ইলেকশন কমিশন গঠন হয়ে গেছে, ইলেকশন পরিচালনা করবার, কনডাক্ট করবার জন্য তার প্রস্তুতি নেবার জন্য সেই ধরনের কোনো প্রবলেম নাই। অতি দ্রুত সেটা করা সম্ভব। আমরা যেটা আশা করেছিলাম যে চিফ অ্যাডভাইজার সুনির্দিষ্ট একটা সময়ের মধ্যে তার রোড ম্যাপ দিয়ে দেবেন; সেটা তিনি দেননি। এটা আমাদের কিছুটা হতাশ করেছে এবং একই সঙ্গে জাতিকেও কিছুটা হতাশ করেছে। বিজয় দিবসের সকালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলি সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে আমাদেরকে যদি, আবার বলছি যদি, অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়ত সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। পরদিন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে কম সংস্কার হলে তা ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে হতে পারে।
সেই প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, তার (প্রেস সচিব) এ কথা সাংঘর্ষিক কথা হয়ে গেছে। আমরা বুঝতে পারছি না যে কোনটা সঠিক। প্রধান উপদেষ্টা যে সময়ের কথা বলেছেন, তাতে কি বিএনপির মনে হচ্ছে যে, সরকার সময়ক্ষেপণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যৌক্তিক তো মনে হয়নি। আমরা বলেছি তো, এটাতে আমরা হতাশ হয়েছি।
বুধবার রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির যে বৈঠক হয়েছে, তার সিদ্ধান্ত জানাতে বৃহস্পতিবার বিএনপি মহাসচিব এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করেন যে, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অস্পষ্ট। তার বক্তব্যে নির্বাচনের একটি সাম্ভাব্য সময়ের কথা বলা হলেও নির্বাচনের রোড ম্যাপ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য রাখা হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টা আর তার প্রেস সচিবের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য আরও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, স্থায়ী কমিটি মনে করে, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে গেছে, সেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিলম্বের প্রয়োজন নেই। নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। জনগণ এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছ হতে সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করে। সভা মনে করে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের ধারা বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছে, বিএনপি তার প্রশংসা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই, এপ্রিশিয়েট করি। আদালত স্বীকৃতি দিয়েছে, পরের নির্বাচিত সংসদই সংবিধান সংশোধনীর একমাত্র উপযুক্ত ফোরাম। রায় নিয়ে বিএনপির প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে কিনা– এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সংশোধনীর শুনানিতে আমরা যেসব বক্তব্য দিয়েছিলাম; কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম; সব ক্ষেত্রেই পুরোপুরিভাবে আসেনি।