নির্বাচন এলেই অভিযোগের বাক্স খুলে বিএনপি

অন্যগুলোর মতো চসিক ভোটও সুষ্ঠু হবে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনকালে তথ্যমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

নির্বাচন এলেই বিএনপি অভিযোগের বাক্স খুলে বসে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এছাড়া তিনি বলেছেন, অন্যান্য নির্বাচনের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে।
গতকাল শনিবার সকালে নগরীর পোর্ট কানেক্টিং সড়কের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন তাঁর সাথে ছিলেন। এরপর মন্ত্রী পাহাড়তলী হর্স শোর লেক পরিদর্শন করেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জিডিপি গ্রোথ ও মাথাপিছু আয়ে ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বিগত ১২ বছরে যেভাবে উন্নতি হয়েছে, তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ও পৃথিবীব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম পৌনে এক কোটি মানুষের শহর। এই শহরের উন্নয়নের সাথে দেশের উন্নয়ন জড়িত। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে পুরো দেশের উন্নয়ন। সে কারণে বিলিয়ন ডলার পরিমাণ টাকা খরচ করে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরে রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসককে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে যেসব অসম্পূর্ণ কাজ ছিল অল্প সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছেন। পোর্ট কানেকটিং রোডসহ আরো কয়েকটি রাস্তা তার অন্যতম উদাহরণ।
চট্টগ্রামে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আউটার রিং রোড হয়েছে। আউটার রিং রোডের জন্য কানেকটিং কিছু রোডের প্রয়োজন। সেগুলোর জন্য সিডিএ প্রকল্প নিয়েছে। তিনটি আউটার রিং মূল শহরের সংযোগের জন্য তিনটি সড়ক হচ্ছে। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমরা আশা করছি, আগামী বছরের মধ্যে কর্ণফুলী টানেলের কাজ সমাপ্ত হবে। এটি উপমহাদেশের প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে সড়ক হচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান কিংবা নেপালে কোথাও এই ধরনের টানেল নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিয়েছেন, এটি সেটিরই বহিঃপ্রকাশ। বে টার্মিনালের কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। সেটি নির্মিত হলে আরেকটি নতুন চট্টগ্রাম বন্দর হবে। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন, অনেক বড় বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশ গত ১২ বছরে যেভাবে উন্নতি হচ্ছে, এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সমগ্র পৃথিবীব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছেন। যে কারণে পাকিস্তান আমাদের দিকে থাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পাকিস্তানি ডেলিগেটরা বলেন, আমাদের একজন শেখ হাসিনা দাও। আমাদের দেশকে বাংলাদেশ বানিয়ে দেব। ভারতের বিভিন্ন টেলিভিশন মিডিয়াগুলোতে আলোচনা হয়, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারতকেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে, মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি ও দেশের কিছু বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা করা মন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের কারণে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু একটি পক্ষ কখনো প্রশংসা করতে পারে না। প্রতিদিন দেখি, আলমগীর সাহেব, তাদের দলের কিছু নেতবৃন্দ, কিছু বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত, তাদের বুদ্ধি আছে, কিন্তু আমাদের সরকার সম্পর্কে বলার সময় তাদের বুদ্ধি কেন লোপ পায়, সেটি আমি বুঝতে পারি না। তারা যেভাবে কথা বলে, দেশে যে এত উন্নয়ন হয়েছে সেটি তারা দেখতে পান না। চোখ থাকতেও তারা অন্ধ। নতুন বছরে প্রত্যাশা থাকবে, তাদের চোখটা অন্ধের মতো কাজ করবে না। চোখ খুলে তারা এ সমস্ত বিষয় দেখবেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্বাচনগুলো পরিচালনা করছে, জনগণের দৃষ্টিতে তারা অত্যন্ত সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছে। দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে প্রযুক্তি-নির্ভর।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী, এজেন্ট ও দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় গিয়ে এখন থেকে পুলিশ হয়রানি করছে এবং সরকারি দল প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বরাবরই এ ধরনের নির্বাচন আসলে তাদের অভিযোগের বাক্স খুলে বসে। এটি তাদের চিরাচরিত নিয়ম। অনেকগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা জয়লাভ করেছে। জয়লাভ করার আগ পর্যন্ত তারা এই ধরনের অভিযোগগুলো করেছে। যে-ই জয়লাভ করেছে, তখন তাদের মুখটা বন্ধ হয়ে গেছে। এই ধরনের অভিযোগ করা তাদের অভ্যাসগত।
এর আগে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, পোর্ট কানেকটিং রোড নিয়ে গত তিনটি বছর এই এলাকার মানুষ অনেক কষ্টে ছিল। গত ৬ মাস এই সড়কটির জন্য আমরা অনেক যুদ্ধ করেছি। সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। আজকে সড়কটি দৃশ্যমান হয়েছে। ৫.৬ কিলোমিটারের সড়ক হলেও এটি চট্টগ্রামের লাইফলাইন। চট্টগ্রাম থেকে বাংলাদেশের অন্য স্থানগুলোতে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র সড়ক। সড়কটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল। সারা দেশ সড়কটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এখন সড়কটির কাজ শেষ হওয়ার পথে। কয়েক দিনের মধ্যে পূর্ব লাইনটি খুলে দেওয়া হবে। পশ্চিম অংশে কিছু কাজ আছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত প্রতিনিধি ড. হাছান মাহমুদ এসেছেন। এটি নিয়ে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ব্রিফ করবেন। এর মধ্য দিয়ে সড়কটি নিয়ে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হবে। শুধু এই সড়ক নয়, পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরে এখন ভাঙা রাস্তাঘাট খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভাঙা রাস্তা ইতিহাসের অংশ গেছে। জোড় ডেবার পাশে বিনোদন কেন্দ্র হবে, স্মৃতিস্তম্ভ হবে। ওখান থেকে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাথরিয়ায় দোকানে অগ্নিকাণ্ডে ঘুমন্ত বৃদ্ধের করুণ মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম ঘিরে বড় সম্ভাবনা