রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাতে সন্তুষ্ট নন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার প্রত্যাশায় হাই কোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এ মামলায় আপিল শুনানির জন্য খালেদা জিয়াকে নিজ খরচে পেপারবুক তৈরিরও অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট।
খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের বেঞ্চ গতকাল রোববার এ বিষয়ে আদেশ দেয়। শুনানিতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ আরও কয়েজন আইনজীবী। খবর বিডিনিউজের।
অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল বলেন, মামলার আপিল দ্রুত শুনানি করতে আমরা নিজ খরচে পেপারবুক তৈরি করতে কোর্টের অনুমতি প্রার্থনা করি। কোর্ট অনুমতি দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। পরের বছর ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট। কিন্তু এরপর আর শুনানি হয়নি।
দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সাল থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান। এর পর থেকে ছয় মাস পরপর সেই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছিল। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো আদালত, টুাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের দেওয়া যে কোনো দণ্ডের ‘মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম’ মঞ্জুর করার এবং যে কোনো দণ্ড ‘মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস’ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কারো দণ্ড (সেনটেন্স) বাতিল করলেও তিনি যে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন (কনভিকশন), সেই রায় বাতিল হয় না। আর আদালত দোষী সাব্যস্ত করলে মুক্তির পর পাঁচ বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করার পরও আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল বলেন, রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করলেও খালেদা জিয়া চান আদালতের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে আসবেন। তাই আমরা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দ্রুত শুনানির জন্য হাই কোর্টে আবেদন করেছি। সেক্ষেত্রে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল বিভাগে যাবে কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নিশ্চয় যাবে। আগামী ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগে ওই মামলার শুনানির জন্য দিন ধার্য করা আছে।