প্রাচ্যদেশীয় সংস্কৃতি ও সংস্কার যেকোনো বিবেচনায় পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির চেয়ে রুচি ও সৌন্দর্যে শ্রেয়। ইতিহাস সাক্ষী আমাদের প্রাচ্যদেশ, সংস্কৃতি ও সম্পদে পশ্চিমাদের চেয়ে সমৃদ্ধ ছিলো বলেই তারা এদেশে বণিক সেজে এসেছিলো নিজেদের লাভের আশায়। ছলে বলে কৌশলে সেই বণিকরা এই হিংসুক জাতির ভাগ্যবিধাতা সেজে দু‘শো বছরের জন্য গোলামির জিঞ্জির পড়িয়ে রেখেছিলো। ভারত উপমহাদেশের কথাই বলছি। আর হিংসুক, স্বার্থপর ও লোভীও বলছি এই উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক লোকজনদের। কেন বলছি সেটা বুঝার জন্য খুব বেশি গবেষণার প্রয়োজন পড়ে না। ইংরেজরা কীভাবে এবং কত সহজে তৎকালীন মোগল এবং মুসলিম শাসকদের কাছ থেকে শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রায় নির্বিঘ্নে দু‘শো বছর শাসন–শোষণ এবং আমাদের সম্পদ লুটপাট করে গেছে এটা আমরা সবাই জানি! এরা ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে যতোটা অস্ত্রের ব্যবহার বা শক্তি প্রয়োগ করে সফল হয়েছে তার চেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছে মীরজাফর–ঘষেটি বেগম, রায় বল্লব, রাজ দুর্লভ কিংবা মিরণদের মত অসৎ, হিংসুক, লোভী এবং স্বার্থপরদের বেঈমানিকে পুঁজি করে। ইতিহাস আরো সাক্ষ্য দেয় ভারত উপমহাদেশের মানুষের মাঝে যেমন দেশ প্রেমিক যোদ্ধার কমতি ছিলোনা তেমনি বিশ্বাসঘাতকদেরও কমতি ছিলোনা। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্লেষণ করলেও আমার কথার সত্যতা আরো একবার পরিলক্ষিত হয়। দেশের স্বাধীনতার জন্য যেমন মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছে তেমনি আরেকটি শ্রেণি ছিলো শুধুমাত্র কিছু ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ ও ভ্রান্তিবিলাসি এবং হঠকারী, যারা ব্যক্তি ও কায়েমী গোষ্ঠী স্বার্থে বিদেশি শোষক, নির্যাতনকারী ও লুটেরা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার নামে এরা দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে গেছে অবলীলায়। আবার মুক্তিযুদ্ধের পর সেই বিশ্বাসঘাতকতার ধারাবাহিকতা পরিলক্ষিত হয় খন্দকার মোশতাক গংদের মাধ্যমে। স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় এই বেঈমানদের দল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের উপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে শুধু বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সাথেই নয় বরং ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দু‘লক্ষ মা–বোনের সম্ভ্রমের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।