নিজস্ব ভূমি নেই সীতাকুণ্ডের ৩শ আদিবাসী পরিবারের

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | রবিবার , ১১ আগস্ট, ২০২৪ at ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে তিন শতাধিক আদিবাসী পরিবার বসবাস করে আসছে। সবচেয়ে বেশি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে উপজেলার ছোট কুমিরা ও বারআউলিয়া পাহাড়ে। এখানে রয়েছে ১৫০টি পরিবার। এছাড়া পৌরসদরের মহাদেবপুর পাহাড়ে ৪৫টি পরিবার, ছোট দারোগারহাট পাহাড়ে ১৫টি পরিবার, শীতলপুর পাহাড়ে ২৫টি পরিবার, সুলতানা মন্দির পাহাড়ে ২০টি পরিবার ও বাঁশবাড়িয়া পাহাড়ে ২২টি পরিবার। এদের বেশির ভাগই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। কিন্তু এদের নিজস্ব ভূমি কিংবা এক টুকরো পাহাড় নেই। অন্যের পাহাড়ি ভূমি খাজনা দিয়ে বসবাস এবং চাষাবাদ করে আসছেন।

সরেজমিনে উপজেলার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া, কুমিরা, পৌরসদরের মহাদেবপুর পাহাড়সহ বিভিন্ন পাহাড়ে ঘুরে ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুঃখে কষ্টে কাটছে তাদের দিনরাত। সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা প্রাক্তন ত্রিপুরা সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা জানান, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে বংশানুক্রমে তারা এই পাহাড়ে বসবাস করছেন। মুক্তিযুদ্ধে এখানে দুই ত্রিপুরা পিতাপুত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরে দেশ স্বাধীন হলে ত্রিপুরা বাসিন্দারা আশায় ছিলেন সরকার নিশ্চয়ই তাদের স্থায়ী জায়গা দিয়ে নিজস্ব ঠিকানা দেবে। কিন্তু তা হয়নি। সেই থেকে ৫৩ বছর পেরিয়ে গেল। ত্রিপুরা পাড়ার অনেক বৃদ্ধ জায়গার আশায় থেকে থেকে মারা গেল। এদিকে জায়গাটি নিজস্ব না হওয়ায় বহুবার ধর্ণা দিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়নি। হয়নি কোনো বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা। পাহাড়ি ছড়া দিয়ে বসে আসা নোংরা ও কারখানার বর্জ্যবাহী পানিতেই চলে ধোয়া, স্নান ইত্যাদি। কখনো কখনো খেতেও হয়। কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, নাগরিক সুবিধার স্পর্শ লাগেনি এখানে। বহু দেনদরবার করে পাড়ার শিশুদের জন্য সমতলে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এই বিদ্যালয়টি প্রায়ই বন্ধ থাকে, দেখার কেউ নেই। ছোট কুমিরা পাহাড়ে বসবাসরত রবীন্দ্র ত্রিপুরা বলেন, আদিবাসী ত্রিপুরারা বংশানুক্রমে পাহাড়ে বসবাস করছেন অথচ মাথা গুঁজানোর মত ভিটেমাটি বন্দোবস্তি পায়নি। একই অভিযোগ করলেন বারআউলিয়া শীতলপুরের কাঞ্চন ত্রিপুরা। তিনি বলেন, আমরা ৬৫টি পরিবার চৌধুরীপাড়ার আবদুর রহমান চৌধুরীর বাগানে বসবাস করছি। প্রতিদিন তাদের বাগানে জঙ্গল পরিস্কারের কাজ করতে হয়। তাদের কথামতো আমাদের চলতে হচ্ছে। আমাদের অধিকার বলতে কিছুই নেই। সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমদ বলেন, তাঁর ইউনিয়নে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত ৬৫টি ত্রিপুরা পরিবারই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব পরিবারকে সমতলে পুনর্বাসন করা দরকার।

চারটি ইউনিয়ন আদিবাসী পল্লীগুলো ঘুরে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢাল কেটে টিন, শণ ও বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট ঘর নির্মাণ করে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকছে লোকজন। আবার কোথাও মাটির দেয়াল দিয়ে ঘরে তৈরি করে থাকছে অনেকে। তাছাড়া ইউনিয়ন বা পৌরসভাভিত্তিক পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন করার সরকারি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি। প্রশাসনের এ ব্যাপারে মাথাব্যথা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভূমধ্যসাগর থেকে শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশী উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধসরে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য