নিউ ইয়র্কের আলোচিত মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি কে?

| শুক্রবার , ২৭ জুন, ২০২৫ at ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার কাছাকাছি চলে আসা ৩৩ বছর বয়সী জোহরান মামদানি ইতিহাস গড়েছেন প্রথম মুসলিম প্রার্থী হিসেবে। পঁচানব্বই শতাংশ ভোট গণনার পর দেখা যাচ্ছে মামদানি ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমোর চেয়ে এগিয়ে আছেন। কুওমো ২০২১ সালে যৌন হয়রানির অভিযোগে পদত্যাগ করেছিলেন এবং এই প্রাইমারিতে তিনি ৩৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ের বড় সমর্থন এবং সাহসী বামপন্থী ধারার মধ্য দিয়ে জোহরান মামদানির এই সাফল্য এসেছে। মামদানি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। আমি নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে আপনাদের ডেমোক্রেটিক মনোনীত প্রার্থী হব। খবর বিবিসি বাংলার। মামদানি উগান্ডার কাম্পালায় জন্মগ্রহণ করেন এবং সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে নিউ ইয়র্কে আসেন। সেখানে তিনি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্সে পড়াশোনা করেন এবং পরে বোওডেন কলেজ থেকে আফ্রিকানা স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে তিনি ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ এর ক্যাম্পাস শাখার একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মিলেনিয়াল প্রজন্মের এই প্রগতিশীল নেতা, যিনি শহরের প্রথম মুসলিম এবং দক্ষিণ এশীয় মেয়র হবেন, তিনি তার শেকড়ের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরে তার ভিত্তিতে এগিয়েছেন। তিনি তার প্রচারণার একটি ভিডিও পুরোপুরি উর্দু ভাষায় করেছেন এবং তাতে বলিউডের সিনেমার দৃশ্য যুক্ত করেছেন। আরেকটি ভিডিওতে তিনি স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলেছেন।

মামদানির স্ত্রী ২৭ বছর বয়সী ব্রুকলিনের সিরিয়ান শিল্পী রামা দুয়াজি, যার সাথে ডেটিং অ্যাপ ‘হিঞ্জ’ এর মাধ্যমে তার পরিচয় হয়েছিল। তার মা মীরা নায়ার ভারতের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এবং বাবা অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার বাবামা দুজনেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। বাবা মাহমুদ মামদানি একজন উগান্ডান নাগরিক হলেও মায়ের সূত্রে ভারতে শেকড় রয়েছে তার পরিবারের।

মামদানি নিজেকে গণমানুষের প্রতিনিধি এবং সংগঠক হিসেবে উপস্থাপন করেন। তার স্টেট অ্যাসেম্বলি প্রোফাইলে লেখা হয়েছে, জীবন যখন অনিবার্য দিকে মোড় নিচ্ছিলোসিনেমা, র‌্যাপ আর লেখালেখির বাঁকবদলে, যাই হোক না কেন, সবসময়ই সংগঠন করা তার মাঝে এক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। যে কারণে বিশ্বের ঘটনাপ্রবাহ তাকে হতাশা নয়, বরং কাজের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

রাজনীতিতে প্রবেশের আগে তিনি আবাসন খাতের একজন কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেছেন, যার মাধ্যমে কুইন্সে স্বল্প আয়ের বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করতেন। মামদানি তার মুসলিম পরিচয়কে তার প্রচারণার অংশ হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি নিয়মিত মসজিদে গিয়েছেন এবং শহরের উচ্চ জীবনযাত্রার খরচের সংকট নিয়ে উর্দু ভাষায় একটি প্রচারণার ভিডিও প্রকাশ করেছেন। আমরা জানি যে, একজন মুসলিম হিসেবে জনসমক্ষে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকে বিসর্জন দিতে হয়এক সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ড্রামের রাজনৈতিক পরিচালক জাগপ্রীত সিং বলেন, মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কারও মধ্যে জোহরানের মতো কাউকে দেখিনি, যিনি সামগ্রিকভাবে আমাদের চিন্তার বিষয়গুলোর প্রতিফলন ঘটান। মামদানি বলেন, তিনি প্রতিদিন ইসলামবিদ্বেষী হুমকির মুখে পড়েছেন, এমনকি তার পরিবারকেও এর সম্মুখীন হতে হয়েছে। পুলিশের মতে, এই হুমকিগুলো ‘হেটক্রাইম’ বা ঘৃণাজনিত অপরাধ হিসেবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, বর্ণবাদ এমন সমস্যা যা মার্কিন রাজনীতির ভঙ্গুর দিকগুলোর ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গণতান্ত্রিক দলের সমালোচনা করেছেন যা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুনরায় নির্বাচিত হতে দিয়েছে এবং তারা যেই হোক বা যেখান থেকেই আসুক না কেন শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছে।

ভোটারদের মনে সম্ভবত ইসরায়েলগাজা যুদ্ধের বিষয়ে প্রার্থীদের অবস্থানের দিকটিও কাজ করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং ইসরায়েলের সমালোচনা করার কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টির বেশিরভাগ নেতার সাথে তার মতবিরোধ হয়েছে। এই অ্যাসেম্বলি সদস্য এমন বিলেরও প্রস্তাব করেছিলেন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অমান্য করে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের সাথে সম্পৃক্ত চ্যারিটি প্রতিষ্ঠানের নিউ ইয়র্কে করমুক্ত সুবিধা বাতিল করবে। তিনি আরও বলেছিলেন যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করা উচিত। অনেকবারই তাকে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেছেন, তিনি ইসরায়েলের ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে অস্তিত্বের অধিকারকে সমর্থন করেন কিনা। একবার তিনি বলেছেন, ধর্ম বা অন্য কিছুর ভিত্তিতে নাগরিকত্বের শ্রেণিবিন্যাস আছে, এমন কোনো রাষ্ট্রকে সমর্থন করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমি মনে করি, এই দেশে আমাদের আধিকার যেভাবে আছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এটাই আমার বিশ্বাস। মামদানি আরও বলেছেন, নিউ ইয়র্ক সিটিতে ইহুদিবিদ্বেষের কোনো স্থান নেই, এবং তিনি নির্বাচিত হলে ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রতিরোধে তহবিল বাড়াবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমামদানি পাগল কমিউনিস্ট, বললেন ট্রাম্প
পরবর্তী নিবন্ধকৃত্রিম উপায়ে ফুটানো হয় অজগরের ৩৩টি বাচ্চা