নিষ্ঠুর মনমানসিকতা আর মানুষের অভিনয়কে নাসির হোসেন জীবন অনেক আগে থেকেই জীবনের পরতে পরতে বুঝে গিয়েছিলেন। কঠিনতম অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন জীবিকার তাগিদে। কারণ যতক্ষণ বেঁচে ছিল ততক্ষণতো অন্নসহ অন্যান্য কিছুরও প্রয়োজন ছিল। তাই নিজের কঠিন রোগকে তিনি বুঝতে দেন নি অনেক এবং গুরুতর অসুস্থ। একটু গভীরভাবে অনুধাবন করলে আপনারা সকলেই বুঝবেন এ সমাজে যার পকেট ভরা থাকে, তাকেই আমরা সকলেই দিতে চাই কিন্তু দারিদ্র মানুষকে আমরা বিশালভাবে কেউ সাহায্য করতে চাই না। জীবনের অসুস্থতায় হয়ত অনেক টাকার প্রয়োজন ছিল কিন্তু আত্মসম্মান আর পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষায় জীবন চিকিৎসার জন্য কারো কাছে মুখ বিক্রি বা নত স্বীকার করেন নি। কারণ কেউ কেউ এটাকে মিথ্যা মনে করত। আবার কেউ কেউ সহযোগিতা করত তার প্রত্যাশার ১০০ ভাগের ৫ ভাগ। হয়ত জীবন হিসেব করে দেখেছে মানুষ চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার কথা বললে প্রকৃত সহযোগিতা পাবেন না বা ক্ষেত্রবিশেষে চরম অপমান উপহার পাবে। আবার জীবন এটাও ভেবে নিয়েছেন তার চিকিৎসার জন্য কেউ যেন তার পরিবারকে ছোট করে না দেখে। তাকে যেন ভুল না বুঝে। কারণ তার প্রতিটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে অনুষ্ঠানের খরচ আর তাঁর ম্যাগাজিন সামগ্রিক ব্যয় সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিবারই হিমসিম ও নানা অপমানের তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। কিন্তু দিনশেষে জীবন কারো বাবা, কারো স্ত্রী, কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো আত্মীয় কারো নেতা, কারো অভিভাবক। আর দায়িত্ব পালনে আর্থিক বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু আত্মসম্মানে জীবন হেরে যান নি। জীবিত শিল্পীদের সঙ্গীতসহ অন্যান্য বিষয়ে বিশালভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যেমন করে বিনোদনের রঙ এর প্রতিটি সাংস্কৃতিক পর্বে জীবন নিজেও কয়েকটি গান করতেন অবলীলায়। গত ১৮ অক্টোবর তার জীবনের বিনোদনের রঙ এর শেষ প্রোগামে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠশিল্পী প্রবাল চৌধুরী ও বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অন্যতম ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণানুষ্ঠানে জীবন ৩ টি গান করেছিলেন। পুরো অনুষ্ঠান আয়োজকের পাশাপাশি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছিলেন। এমনকি ঐদিন পূর্ণিমা দিদির সাথে একটি সুন্দর গানে দ্বৈত পরিবেশনা করেছিলেন। ঐ সময়েও জীবন চূড়ান্ত অসুস্থ ছিলেন। নাসির হোসেন জীবন সম্পাদিত বিনোদনের রঙ এর প্রতিটি সংখ্যায় শিল্পীদের প্রাধান্য দেয়া হতো। প্রতিটি ঈদ সংখ্যা আপ্রাণভাবে বের করার চেষ্টা করতেন। জীবিকার প্রয়োজনে কখনো গাড়ি চালিয়েছেন কখনো বাইক, কখনো রাইডিং শেয়ার করেছেন কখনো চাকরি করেছেন, কখনো ক্ষুদ্র ব্যবসাও করেছেন। তবুও শিল্প সংস্কৃতি, নাটক, চলচ্চিত্র থেকে তাকে দূরে রাখা সম্ভব হয়নি। সবার সাথেই ভালো ব্যবহার আর বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রদর্শন করতেন। কখনো মঞ্চ নাটকের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতি তুলে ধরতে, কখনো বিনোদনের পাতায় দেশের অনেক গুণী ও নতুন উদীয়মান শিল্পীদের জীবনকে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। কখনো চলচ্চিত্র কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। কখনো নাটকেও কাজ করেছেন।