নাসিমন ভবনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২০

ফটিকছড়ি বিএনপির প্রতিনিধি সভা পণ্ড

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

নগরের নাসিমন ভবনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে পণ্ড হয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির প্রতিনিধি সভা। গতকাল দুপুরে ফটিকছড়ি আসন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার এবং উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীরের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে দলীয় কার্যালয়ের ভেতর চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি করা হয়। গেটসহ ভেতরে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা হেনস্থারও শিকার হন। সংঘর্ষ চলাকালে নাসিমন ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে কার্যালয়ের ভেতরে গিয়ে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত সোমবার থেকে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে উত্তর জেলা বিএনপির আওতাধীন উপজেলা ও পৌরসভাগুলোর ধারাবাহিক প্রতিনিধি সভা শুরু হয়। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি সভায় নেতৃ পর্যায়ের ৩০ থেকে ৪০ জন উপস্থিত থাকতেন। গতকাল সকালে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সভা শেষ হয়। এরপর ফটিকছড়ি উপজেলা ও পৌরসভার সভা হওয়ার কথা ছিল। রাঙ্গুনিয়ার সভা শেষ করে কেন্দ্রীয় নেতারা দুপুরের খাবার খেতে যান। তারা ফিরে এসে সভাস্থলে দেখতে পান সরোয়ার আলমগীরের নেতৃত্বে শতাধিক লোক নির্ধারিত চেয়ার দখল করে বসে আছেন। এছাড়া নিচে ও বারান্দায়ও অবস্থান করে তারা স্লোগান দিতে থাকেন। বিএনপির সভা হলেও উপজেলা ছাত্রদল ও যুবদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে স্লোগানধারীদের মধ্যে। এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সভায় আমন্ত্রিতদের বাইরে যারা আছে তাদের সভাস্থল ত্যাগ করার আহ্বান জানান। কিন্তু তারা বের না হয়ে উল্টো স্লোগান দিতে থাকেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গোলাম আকবর খোন্দকার সরোয়ার আলমগীরকে বলেন, এটা প্রতিনিধি সভা। নেতারা থাকবেন। কর্মীদের বের করে দাও। প্রতিউত্তরে সরোয়ার আলমগীর বলেন, তারা তৃণমূলের কর্মী, তাই সভায় থাকবে।
এরপর সরোয়ার আলমগীর ও বাহারের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এ সময় কয়েকজনের হাতে লাঠিসোটা দেখা গেছে। একপর্যায়ে গোলাম আকবর খোন্দকারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সভাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। এরপর সরোয়ার আলমগীরের অনুসারীদের দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার আজাদীকে বলেন, বর্ধিত সভায় ৩০ থেকে ৪০ জনের উপস্থিতি কনসিডার করি। কিন্তু ফটিকছড়ি উপজেলার বর্ধিত সভায় ছাত্রদল, যুবদলের প্রায় দুই-তিনশ নেতাকর্মী এসে চেয়ার দখল করে। তারা এসেছে সরোয়ার আলমগীরের নেতৃত্বে। তাদের সভাস্থলের বাইরে যেতে বলা হলেও থেকে যায়। তখন আমি সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সভা স্থগিত করে চলে আসি।
হাতাহাতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফটিকছড়িতে দুইটা গ্রুপ আছে। তাদের মধ্যে হতে পারে। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, দলের হাই কমান্ড জানেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ বিষয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর আজাদীকে বলেন, তারা চেয়েছে পকেট কমিটি গঠন করতে। তা জানতে পেরে সেখানে তৃণমূলের কর্মীরা উপস্থিত হয়। তখন বাহারের ভাইয়েরা তৃণমূল কর্মীদের মারধর করেছে। এতে ২০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে আলম নামে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রতিনিধি সভায় সীমিত সংখ্যক লোকের উপস্থিতি থাকার বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩০ জন নিয়ে কি প্রতিনিধি সভা হয়? এটা তো আহ্বায়ক কমিটির সভা না যে লোক কম হবে। ফটিকছড়িতে ২০টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভা আছে। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ২০ জন করে এলেও ৪৪০ জন হয়। আবার দুই পৌরসভা থেকে ২০ জন করে হলেও আরো ৪০ জন। ফলে স্বাভাবিকভাবে উপিস্থিতি বেড়েছে।
কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার আজাদীকে বলেন, সরোয়ার আলমগীরের উদ্দেশ্য ছিল সভা বানচাল করা। সেটা সে করতে পেরেছে। তৃণমূলের ৩০ নেতার উপস্থিতিতে প্রতিনিধি সভার আয়োজন করছিলাম। সেখানে তাকে এবং তার লোকজনকেও দাওয়াত করা হয়েছিল। কিন্তু সে এক ঘণ্টা আগে থেকে তার গার্মেন্টসের কয়েকশ শ্রমিক নিয়ে আসে। তারা নেতৃবর্গের ওপর হামলা করেছে। ধাক্কাধাক্কি করেছে। গালাগালি করেছে। দরজা, লোহার গ্রিল ভাঙচুর করেছে। মূল কথা হচ্ছে সে গিয়াস কাদেরের অনুসারী। তাই গিয়াস কাদেরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।
‘ঘটনার জন্য আপনি দায়ী’, সরোয়ার আলমগীরের এ অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে তো দায়ী করবে। যেহেতু আমি ফটিকছড়িতে দলটাকে সংঘটিত করছিলাম, সেজন্য আমার ওপর যত ক্ষোভ।
কেউ আহত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, ধাক্কাধাক্কিতে কেউ কেউ আহত হয়েছেন। তারা তো পুরো প্রস্তুত হয়ে এসেছিল। যেহেতু নেতৃপর্যায়ের প্রতিনিধিরা আমন্ত্রিত ছিলেন তাই আমার কোনো কর্মী ছিল না। যদি বিএনপির কর্মী আসত তখন কি যে অবস্থা হতো!
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তর জেলায় দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সরোয়ার আলমগীর গিয়াস কাদেরের অনুসারী বলে পরিচিত। গোলাম আকবরের সঙ্গে গিয়াস কাদেরের দূরত্বকে কেন্দ্র করেই গতকালের সংঘর্ষ হতে পারে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা জানান। গতকাল সংঘর্ষ চলাকালে নাসিমন ভবনে রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় গিয়াস কাদেরের অনুসারী হিসেবে পরিচিতদের দেখা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বামী আনিসুলের ৫ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধদুই প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ১০