বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা রোধে চট্টগ্রামে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা এই সময়ের জন্য জরুরি ছিল। ১৩ নভেম্বর নগরীর সার্কিট হাউজে জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেগুলো জনমানসকে প্রশান্তি দিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, ট্রেন, বাস ও লঞ্চযোগে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ছবি তোলা বা ভিডিও করার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পরবর্তীতে তাদের শনাক্ত করা যায়। পাশাপাশি সকল যাত্রীকে সার্চ করতে হবে। যাতে কেউ পেট্রোল বোমা বা বিস্ফোরক জাতীয় কোনো কিছু বহন করতে না পারে।
আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় রেললাইন, রেলস্টেশন ও বাস স্টেশনে নিরাপত্তার জন্য আনসার ও বিজিবি নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক সমন্বয় করে এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অন্য সিদ্ধান্তগুলো হলো, তিন বাহিনীর সমন্বয়ে র্যাব–বিজিবি–পুলিশ যৌথ টহল দেবে। যেন শহরে এবং অন্যান্য স্থানে সন্ত্রাসীদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়। প্রতিটি জেলা এবং বিভাগে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে একটি কন্ট্রোল রুম করতে হবে। যেকোনো সমস্যা কন্ট্রোল রুমে জানানোর সাথে সাথে তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জনগণের মাঝে লোকাল ডিশ চ্যানেল বা লোকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে জানিয়ে দিতে হবে যেন নাশকতার আগাম খবর পেলে ৯৯৯, জেলা বা বিভাগীয় কন্ট্রোল রুমে তথ্য জানিয়ে দেয়। মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন নতুন মাদক যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। জেলায় ও মহানগরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার, বিজিবি, গোয়েন্দা, র্যাব, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদেরকে কার্যক্রম বৃদ্ধি করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। পেঁয়াজ, ডিম, চিনি, রসুন, আদা, মসলা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করে পণ্য ক্রয়ের রসিদপত্র, মূল্য তালিকা যাচাই, ভেজাল দ্রব্য, অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদাম ও পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। প্রত্যেক উপজেলায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্সবিহীন চালকদেরকে লাইসেন্সের আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন বদ্ধপরিকর। তবে এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা প্রতিনিধিত্বশীল মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নাশকতা মোকাবিলা করতে হবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা হতে পারে– এমন ইস্যুতে অপপ্রচার বন্ধ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে আরও কঠোর হতে হবে। বাসে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্ত ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া নাশকতা প্রতিরোধে এমন কিছু নতুন পদ্ধতি চালু করতে হবে– যাতে সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হবে।
যদিও আমরা জানি, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। চোরাগোপ্তা কিংবা ছদ্মবেশে হামলা মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যার কিছু নমুনা দেখছি। যারা এ ধরনের চোরাগোপ্তা নাশকতা করছে, তারাও কিন্তু তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে। এসব মাথায় রাখতে হবে। এখন যারা যাত্রী বেশে চোরাগোপ্তা হামলা কিংবা নাশকতা করছে সেটি শতভাগ নির্মূল করা চ্যালেঞ্জিং। তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বাসে যাত্রীবেশে নাশকতাকারীদের আগমনকে রোধ করতেই হবে। যত নির্মম নিষ্ঠুর হোক না কেন, আইন প্রয়োগ করতে হবে কঠোর হাতে। নাশকতাকারীরা যদি তাদের অপতৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। মোট কথা, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুস্কৃতকারীরা যাতে এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আগুন ও বোমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।