চন্দনাইশের দোহাজারী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সের বাসা থেকে সুমি নামে ১৩ বছরের এক কিশোরীর লাশ উদ্ধার করেছে চন্দনাইশ থানা পুলিশ। গতকাল রবিবার সকালে লাশটি উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই কিশোরীকে নার্স সুখী প্রভা দেবী লালন-পালন করে আসছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স সুখী প্রভা দেবী দীর্ঘদিন হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করছেন। ওই কোয়ার্টারে থাকেন তার স্বামী দয়াল রক্ষিত (৫৫) ও পুত্র সুকান্ত রক্ষিত (২৬)। পাঁচ বছর পূর্বে হাসপাতাল এলাকায় সুমি নামে ওই কিশোরীকে কুড়িয়ে পাওয়ার পর তাকেও লালন পালন করে আসছিলেন তিনি। সেই থেকে সুমি ওই বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে বাড়ির কাজকর্ম করতো। গতকাল সকালে ওই কিশোরীর রহস্যজনক মৃত্যুর খবর পেয়ে দোহাজারী তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মো. জাকির হোসেনসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে এবং সুরুতহাল রির্পোট তৈরি করেন। এসআই জাকির হোসেন জানান, লাশটি উদ্ধারের সময় তার শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে গলায় ফাঁসের চিহ্ন ছিল।
সিনিয়র স্টাফ নার্স সুখী প্রভা দেবী সাংবাদিকদের জানান, ২০১৭ সালে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাকে কুড়িয়ে পাওয়ার পর সন্তান হিসেবে লালন পালন করছিলেন। সকাল আনুমানিক ৬টায় সে ঘুম থেকে ওঠে ঘর ঝাড়ু দেয় এবং হাঁস মুরগিকে খাবার দিয়ে রান্নাঘরে ঢোকে। পরবর্তীতে আমরা ঘুম থেকে ওঠে সুমিকে দেখতে না পেয়ে তাকে খোঁজাখুঁজি করি। এক পর্যায়ে রান্না ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা আটকানো অবস্থায় দেখতে পাই এবং ডাকাডাকি করার পরও ভেতর থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় সে ঝুলে রয়েছে। পরে আমরা বিষয়টি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আবু তৈয়বকে জানাই। আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং পুলিশকে অবহিত করেন।
খবর পেয়ে গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) জাহাঙ্গীর আলম। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজাদীকে জানান, ওই কিশোরীর মৃত্যুর কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা না হলেও নার্স সুখী প্রভা দেবীর ছেলে সুকান্ত রক্ষিতকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকালে সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি আত্মহত্যা। ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। রির্পোট পাওয়ার পর তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলেও জানান তিনি। চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সরকার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. শাহিন হোসাইন চৌধুরীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।