যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস নারীদের একটি বড় অংশের সমর্থন পাচ্ছেন। আর তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের নারী সমর্থনে বেশ খানিকটা ঘাটতি আছে। সে কারণে নির্বাচন ঘনিয়ে আসতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে নারী ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। আর সে চেষ্টাতেই উইসকনসিনের গ্রিন বে’র কাছে গত বুধবার রাতের এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি বলেছেন, নারীরা চান আর না–ই চান, আমি তাদের রক্ষা করব। আমি যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের থেকে তাদের (নারীদের) রক্ষা করব। আমি তাদেরকে অন্য দেশ থেকেও রক্ষা করব, যারা আমাদেরকে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে চায়। ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে সঙ্গে সঙ্গেই লুফে নিয়ে তীব্র আক্রমণে বিঁধেছেন কমলা হ্যারিস। ট্রাম্পের ‘নারীরা চান বা না চান’ কথাটিকেই বিশেষভাবে সামনে এনেছে হ্যারিস ও তার প্রচার শিবির। এঙে এক পোস্টে হ্যারিস লিখেছেন, ডনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, আপনি আপনার শরীরের সঙ্গে কী করবেন সে বিষয়ে তার (ট্রাম্প) সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত; সেটি আপনি পছন্দ করুন আর না করুন। ওদিকে, হ্যারিসের প্রচার শিবিরের মুখপাত্র সারাফিনা চিতিকাও এক্সে এক পোস্টে বলেন, ট্রাম্প মনে করেন তিনি আমেরিকার নারীদের চেয়ে বেশি ভাল জানেন। খবর বিডিনিউজের।
হ্যারিস এবারের নির্বাচনী প্রচারে নারীদের প্রজননের স্বাধীনতা, গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে কথা বলে এসেছেন। ওদিকে, গর্ভপাতের বিষয়ে ট্রাম্প মনে করেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার রাজ্যগুলোর ওপর। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছর আগে রো ভি ওয়েড মামলায় যে রায়ে গর্ভপাতকে বৈধ করা হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট তা পাল্টে দিয়ে দেশটিতে নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করার পর ট্রাম্প বরাবরই এর কৃতিত্ব দাবি করে এসেছেন। যদিও তিনি ক্ষমতায় গেলে কেন্দ্রীয়ভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করবেন এমন কথা বলেননি। আবার কংগ্রেস গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইন পাস করলে তাতে তিনি ভিটো দেবেন তাও বলেননি। ট্রাম্পের এমন অবস্থানের কারণে গত ১০ সেপ্টেম্বরে তার সঙ্গে প্রথম টিভি বিতর্কে হ্যারিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, বুঝে দেখুন, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় গেলে তিনি জাতীয়ভাবে গর্ভপাত নিষিদ্ধ আইন করবেন। সম্প্রতি কয়েকমাসে ট্রাম্প স্যোশাল মিডিয়ায় এবং বিভিন্ন নির্বাচনী সমাবেশে নারীদের মন জয়ের জন্য তাদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলে এসেছেন। বলেছেন, নারীদের কমিউনিটিকে তিনি আরও সুরক্ষিত করবেন। নারীরা যাতে গর্ভপাতের বিষয়ে চিন্তা না করে সেটিও নিশ্চিত করবেন। উইসকনসিনে গত বুধবার রাতের বক্তব্যে ট্রাম্প নারীদের সুরক্ষার বিষয়ে একই ধরনের কথা বলেছেন। তবে সেখানে তার নতুন সংযোজন ছিল, ‘নারীরা চান বা না চান’ কথাটি।
ট্রাম্প পিতৃতুল্য দৃষ্টিকোণ থেকে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে এমন কথা বললেও, বহু সমালোচকের কাছেই কথাটি ট্রাম্পের নারীবিদ্বেষী বক্তব্য এবং নারী যৌন নিপীড়নের দায়ে আদালতে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।