বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় -‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তাঁর করিয়াছে নারী অর্ধেক তাঁর নর’। নারী আর পুরুষ যেন একই মুদ্রার দুইটি পিঠ। নারীকে ছাড়া পুরুষ আর পুরুষকে ছাড়া নারী জীবন পরিপূর্ণতা পায় না। নারী বা মহিলা শব্দের অর্থ হলো মহান বা মহৎ। কিন্তু যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত, অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়ে আসছে। নারী যেন শুধু কাম বাসনা চরিতার্থ করার আর সন্তান জন্মদানের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে কিছু ভোগবাদী পুরুষ সমাজের মতে। কিন্তু আজ নারীরাও পুরুষদের সাথে সমানভাবে কাজ করছে সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নারীরা সমান যোগ্যতা দেখাচ্ছে না। একজন পুরুষ শুধু কর্মক্ষেত্রে কাজ করেন, অপরদিকে একজন নারী কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করেও ঘরে ফিরে রান্না করা, সন্তান প্রতিপালন করা, পরিবারের অন্য সদস্যদের দেখাশোনা করা, সামাজিকতা পালন করা পর্যন্ত পরিবারের সমস্ত দায়িত্বই পালন করেন। তাই নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনে জাতীয় জাগরণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশেষ তাৎপর্যবহ। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪৯ ভাগ নারী। সেদিক থেকে নারীরা দেশের অর্ধেক মানব সম্পদ অর্থাৎ অর্ধেক শ্রম শক্তির প্রতিনিধি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রচলিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুশাসনে নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণসহ নানারকম সুযোগ থেকে বঞ্চিত। নারী মৃত্যুর হারও পুরুষদের তুলনায় বেশি।অল্প বয়সে বিয়ে, সন্তান জন্মদান, অপুষ্টিজনিত রোগ, স্তন ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য রোগেও নারী মৃত্যুর হার বেশি। আবার আত্মহত্যা, খুন, শারীরিক নির্যাতন ও যৌতুকের কারণে নারী মৃত্যুর হার বেশি। অথচ জীবিকার তাগিদে নারীরা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি সেক্টর তৈরী পোশাক শিল্পে কাজ করছে বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিক। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আর ঘাম ঝরানো কাজে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। অথচ নারীরা সমাজের প্রতিটি সেক্টরে সমান অবদান রাখার পর ও বৈষম্যের শিকার। জাতীয় সম্পদে নারীর অসম অধিকার, পারিবারিক আইনে নারীর অসম অধিকার, বাবার সম্পত্তিতে নারীর অসম অধিকার নারীকে বঞ্চিত করে রেখেছে। নারীর মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি, অধিকার, মূল্যায়ন এখনো তিমিরেই রয়ে গেছে। কিন্তু কবির ভাষায়, ‘কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষী নারী’ যদি তাই হয় নারী কেন শুধু অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত হবে?