নারীর মানসিক সহযোগিতা

হৈমন্তী তালুকদার | শনিবার , ২০ মার্চ, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

নারীর জীবনটা আসলেই কচুপাতার পানির মতো। বিয়ের আগে থেকেই বিয়ে হবে একদিন- এ রকম দুষ্টমিটা এক ধরনের নীরব মানসিক চাপ সকল মেয়ের জীবনে, রসের রসিকতা যেন মানসিক নিপীড়ন মনে হয় কোনসময়। নারীকে হতে হবে দশভূজা।এই তো পরের ঘরে চলে যাবে, কাজ শিখতে হবে, সুন্দর হতে হবে, পড়াশোনা শেষ করতে হবে, কাজেকর্মে পারদর্শী হতে হবে, এভাবে বসতে হবে, জোরে হাসা যাবেনা, কথার মধ্যে সুমিষ্টভাব সবসময়ই থাকতে হবে, রান্না শিখে নিতে হবে- একদিন তো পরের ঘরেই যেতে হবে। এ বিষয়গুলো পরিবারের কেউ না কেউ চিন্তা করে, শিখায় আবার কিছু পরিবারে একটু আলাদাভাবে মেয়েদের বড় হতে দেয়, সেই জায়গায় পড়াশোনার পাশাপাশি গান, আবৃত্তি, আবার শারীরিক চর্চা যেমন কারাতে তাইকুণ্ডুও শিখায় নিজেকে সৃজনশীল ও নিজেকে রক্ষা করার জন্য। একজন মেয়ে সবদিক থেকেই লড়াইটা করতে শিখে নেয়। পরিবার ও পরিবেশ দুটোকে নিজের ভিতরে লালন করাটাই যেন নারীদের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়। পরিবার, পরিবেশ, ধর্মীয় আচার-আচরণ সবকিছুই সত্য ও সুন্দর যখন একজন নারী সব মানিয়ে চলতে পারে। কিন্তু সবসময়ই কি সবকিছু মানিয়ে চলতে পারে একজন নারী?
যখন একজন নারী তাঁর গুণের জন্য সবকিছুতেই শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে পারে তখনই সম্মানটা তাকে দেওয়া হয়। আর বাকীদের নীরব বেকারত্বের মানসিক চাপে মনের গহীনে কষ্ট জমতে থাকে। কিন্তু একেকজন একেক বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠে, আমাদের সমাজে সবসময়ই পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে ও মেনে চলতে হয়। যারা সকলকে নিয়ে ভালো থাকাটাকে উপভোগ করে, কিন্তু এই ভালো থাকাটা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, সবসময়ই মন বুঝে চলতে আর একেক পরিবেশে নতুনভাবে নিজেকে বারংবার মানিয়ে নিতে কখনো হিমশিম খেতে হয় একজন নারীকে।
একজন নারী যখন মা হয় তখন তার দায়িত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়, চাইলেও সে নিজের পারিবারিক দায় এড়াতে পারে না, সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য একজন মা সবসময়ই উদ্বিগ্ন। সাংসারিকভাবে একজন নারীকে শুধু অন্যকে মানসিকভাবে তুষ্ট করার মেশিন যেন ভাবা না হয়। তারও মন মানসিকতা যেন বুঝে চলাটা শুরু হয়। বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে আসার পথটাও চলার পথটা যেন মসৃণ থাকে, ঠিক তেমনি একজন নারীও তার সকল মন মানসিকতা দিয়ে নতুন মানুষদের ভালোবাসা দিতে শিখে। একজন নারী হিসেবে একটা জীবনের নানা পরিবর্তনগুলোর সাথে তাকে মানিয়ে নিতে আমরা যদি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সানন্দে সহযোগিতা করি তাহলে আমাদের নিজেদের মধ্যে অনেক দূরত্ব কমে আসে। শুধু একটা কথাই বলার আছে আমরা নারী আমরাই পারি।
কথাটাতে যেন সবকিছুতেই পারতেই হবে বিষয়টা না আসে, যে বিষয়টা আমাদের অপছন্দের সেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যেন থাকে। পরের ঘরে বিয়ে হয়ে চলে যাওয়াটা খুব কষ্টের। চেনা মানুষের জায়গাটা নতুন নতুন মানুষদের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা অনেকের জীবনে একটু কষ্ট সাধ্য হয় বৈকি। আমরা কি পারি না একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীকে সুখে-দুঃখে সবসময়ই সহযোগিতা করতে, তার ভালো মন্দ মেনে নিয়ে পাশে থেকে সাহস দিতে, অনুপ্রেরণা দিতে! তবেই আমাদের নারী সমাজ হবে সুন্দর ও সত্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়ছে মশার উপদ্রব
পরবর্তী নিবন্ধনাম হোক ‘জয় বাংলা’ উদ্যান