একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতা গভীরভাবে যে সকল লেখকদের রচনায় মূর্ত হয়ে উঠতে শুরু করে, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ উত্তর ঔপনিবেশিক এক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। বিশ্বায়নের প্রভাব, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, সামাজিক দুর্বৃত্তায়ন, অর্থনৈতিক নৈরাজ্য সহ বিভিন্ন অবক্ষয়ের কবলে পড়ে বাংলাদেশের সমাজ দ্রুত রূপান্তরিত হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে ব্যক্তিজীবনও এর থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। নারী–পুরুষের সম্পর্কেও দেখা দেয় নতুন মাত্রা। নতুন টানাপোড়েন।
বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতায় নারী–পুরুষের সম্পর্কের ভেতরকার অসংগতিগুলো কী কী, সেসব পাঠকের দৃষ্টি এবং বোধের সীমায় নিয়ে আসাটাই ছিল সেলিনা হোসেনের মূল লক্ষ্য। উপন্যাস তো বটেই, কথাশিল্পী তাঁর ছোটগল্পেও এই কাজটা নিরলসভাবে করে যাচ্ছেন এখন অব্দি।
সেলিনা হোসেনের কথাসাহিত্য সম্পর্কে যে একটা মন্তব্য নির্দ্বিধায় করা যায় তা হলো, অনেক স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিকের মাঝে একমাত্র সেলিনা হোসেনের লেখাতেই উপস্থাপিত হয়েছে বহুমাত্রিক নারীজীবনের বাস্তব ছবি। একক কোনও গল্প নয়, একটিমাত্র কাহিনিও নয়, টুকরো টুকরো নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নারীদের জীবনের পূর্ণাঙ্গ একটা ছবি পাওয়া যায় তাঁর রচনায়। এদেশের নারীরা যে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে চলেছে সেলিনা হোসেন মূলত সেই জীবনেরই রূপকার।
তাঁর গল্প মানেই নারীর সত্যিকারের গল্প, বাংলাদেশের নারীদের পূর্ণাঙ্গ জীবনের গল্প। ব্রাত্য নারী থেকে অভিজাত নারী, নিম্নবর্গের নারী থেকে উচ্চবর্গের নারী, সাধারণ সরল গ্রাম্য নারী থেকে প্রখর রাজনীতি সচেতন শহুরে নারী….., অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় সকল নারীকেই গল্পের চরিত্র করে তুলেছেন সেলিনা হোসেন। আর তাঁর গল্পের গুরুত্বও মূলত এখানেই। পাঠের সময় পাঠকের চোখের সামনে খুলে যাবে এমন একটা জগৎ, যা কাহিনির মৌলিকত্বেই শুধু নয়, ইঙ্গিতগর্ভ ভাবনার সূত্রেও অনন্যসাধারণের দাবি রাখে।
তাঁর গল্প শুধু গল্প নয়, নানা ভাবনার বীজও পোঁতা থাকে এখানে। উপনিবেশবাদ, গণতন্ত্র, রাষ্ট্রতন্ত্র, প্রগতিশীল রাজনৈতিক আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রভৃতির ভাবনাকে কেন্দ্র করে সেলিনা হোসেন একটার পর একটা সার্থক উপন্যাস আর ছোটগল্প রচনা করে গেছেন। সর্বশেষ তাঁর ভাবনায় যুক্ত হয়েছে জেন্ডার।
বলা চলে জেন্ডারের উৎসই হচ্ছে নারীবাদ। নারীবাদ নারীর জীবনকে এমনভাবে উন্মুক্ত করে দেখাতে শুরু করে যেখানে নারী–পুরুষের সম সম্পর্ক নয় বিষম সম্পর্কই প্রাধান্য পায়।
‘যা কিছু ব্যক্তিগত, তাই রাজনৈতিক’। নারীর জীবনকে এখন এভাবেই দেখা হয়। সমাজ নির্ধারিত এক জীবন নারীর। আর এই সমাজ নারীর জীবনকে এমন এক বৃত্তের মাঝে আটকে দেয় যে, নারী সেই বৃত্তের মাঝেই শুধু ঘুরপাক খেতে থাকে। সেই বৃত্তের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে, নারী ও পুরুষকে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি, অনুশাসন, কোনটাই একদৃষ্টিতে দেখে না। নারীর জীবন পুরুষের তুলনায় সবসময়ই অধস্তন। বিভিন্ন বিষয়ে পুরুষের যে অধিগম্যতা আছে, নারীর কিন্তু সেসব নেই। নারী–পুরুষের সম্পর্ক তাই অসম। নারীর জীবনের সবক্ষেত্রেই থাকে পুরুষের আধিপত্য। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনও নারীর ব্যক্তিগত জীবনকে তাই কোনও ব্যক্তির জীবন মনে করেননি।
নারী–পুরুষের সম্পর্ক মূলত কিভাবে শুধু একজন নারীর জীবনকেই সংকটাপন্ন করে তোলে, সেটাই তাঁর গল্পের বিষয়বস্তু। তবে শুধুমাত্র নারীর অধস্তনতার ছবি নয়, তার বিপন্নতা, তার পরাজয়ের ছবি নয়, সেখান থেকে নারীর মানসিক উত্তরণের ছবিও এঁকেছেন তিনি তাঁর গল্পে। তাই সেলিনা হোসেনের গল্পের অধিকাংশ নারীই হচ্ছে দারুণ লড়াকু। পুরুষতান্ত্রিক প্রতিকূল অবস্থাকে অগ্রাহ্য করে তারা খুঁজে নিয়েছে আত্মমুক্তির পথ।
আত্মজাগরণের সূত্রে পরাভব নয়, পুরুষবশ্যতা নয়, আত্মপ্রতিষ্ঠায় হচ্ছে তাদের লক্ষ্য। পুরুষতন্ত্রকে অবলীলায় অগ্রাহ্য করে আত্মমুক্তির মধ্য দিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া কয়েক নারীর কাহিনি এই প্রসঙ্গে অবতারণার দাবী রাখে। আধুনিক চিন্তাচেতনায় দীক্ষিত নয় এমন গ্রামীণ নারীসমাজ, যারা এখনও পুরুষকেই মনে করে তাদের জীবনের ধ্যান–জ্ঞান। পুরুষকে ঘিরেই নারীর ভেতর গড়ে উঠেছে পাপ–পূণ্যের বোধ। তাদের যৌন জীবনও এভাবেই পুরুষের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু সেলিনা হোসেন নারীদের পঙ্গুভাবনার এই ছকটাকে ভেঙে দিয়েছেন ‘আকালির স্টেশনের জীবন’ শীর্ষক গল্পের নারীচরিত্র ‘আকালি’ র মাধ্যমে। গ্রাম থেকে উঠে আসা নিম্নবর্গের অধীন সহজসরল ষোড়শী কাজের মেয়ে মালিকের ছেলের সাথে শরীরী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পাপ–পুণ্যের বোধ থাকলেও সে সম্পর্কের মাঝে আকালি কোন পাপ খুঁজে পায়নি, কেননা সেই পুরুষ ছিল তার একান্ত আকাঙ্ক্ষার জন, তার রাজপুত্র। তবে আকালি এটাও বুঝেছিল যে, শ্রেণি অবস্থানের কারণে রাজপুত্রকে ভালোবাসা যায় না। উঁচুস্তরে অবস্থিতদের সাথে ভালোবাসা হয় না। কিন্তু এতে তার মনে কোনও খেদ নেই। মনে কোনও দুঃখও নেই। কারণ, সুখটুকু তো সে নিজেও ভোগ করেছিলো। সেই কয়েকটা দিনের সুখটুকুকেই সে জীবনের পরম পাওয়া মনে করে। অন্যরা সেটাকে অন্যায় বলে মানলেও আকালির কাছে নিজের সেই ভালোলাগাটাই হচ্ছে ন্যায়। আকালির শরীরে অনাহুত সন্তান আসার লক্ষ্মণ প্রকট হয়ে উঠায় বাড়ির গৃহিনী তার চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় যেদিন বের করে দেয় সেদিন আর আকালির দাঁড়াবার জায়গা থাকে না। বস্তির আশ্রয়দাত্রী নিশি আকালির এতবড় সর্বনাশ কে করেছে জানতে চাইলে, বিচার চাওয়ার কথা বললে আকালির মনে মনে ভাবে, রাজপুত্র তো কোনও অন্যায় করেনি! তবে তার বিচার কেন?
‘কবি না ব্যাডাডা কেডা?
‘না’।
নিশির চিৎকারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ উত্তর আকালির।
‘কি কস? তর সন্তানের বাপ লাগবো না’?
আকালি আবারও বলে ‘না’।
উত্তর দেয়ার সময় আকালির চকচকে নীল আর কালো চোখের উজ্জ্বল দৃষ্টি দেখে থমকে যায় নিশি! হতবাক সে!
গল্পে আকালির কাছে মানবিক সম্পর্কটাই প্রধান। তাইতো সে কত সহজে বলতে পেরেছে যে, তার সন্তানের বাপ লাগবে না। পুরুষতন্ত্রের প্রভাবে তৈরি হওয়া নারীভাবনার ছকটা এভাবেই ভেঙে দিলেন সেলিনা হোসেন। এই ভাবনা নি:সন্দেহে তাঁর চেতনাপ্রসূত, নারীর আত্মমুক্তির নতুন সূত্র তুলে ধরে পাঠকের সামনে।
‘মতিজানের মেয়েরা’ গল্পে মতিজানও এক নিম্নবর্গের নারী। বিয়ের পর এই সংসারের একজন বাড়তি মানুষ। পিতা বিয়েতে যৌতুক দিতে না পারায় এই সংসারে সর্বদাই এক ভয়ের মধ্যেই জীবন কাটায় সে। নিজের সংসারে তার কোন অধিকার নেই। শাশুড়িই সব এখানে। স্বামীও তার প্রতি উদাসীন। কাছে পায় না স্বামীকে কখনো। মতিজানের অন্তর থেকে সংসার করার সব সাধ উবে যায়।
অভিমান করে স্বামীকে কিছু বললে স্বামী বলে দেয়, ‘হামাক কিছু কব্যানা, হামি কিছু জ্যানি না, কিছু করব্যার পারমো না। মা ই সব’।..
মতিজানের স্বামী আবুলের কাছে আবার মা, স্ত্রী কেউই মানুষ হিসাবে গ্রাহ্য নয়। সে গাঁজা খায় আর নিজের খেয়ালখুশিমাফিক চলে।
মতিজানের দিন আর রাত কাটে একাকী। দু:সহ জীবন তার!
এই প্রেক্ষাপটে তার জীবনে আসে স্বামীর বন্ধু লোকমান। পরপুরুষ লোকমানের সাথে গোপন শারীরিক সম্পর্কের জেরে মা হতে চলে মতিজান।
শাশুড়ি নির্দেশ দেয়, বংশ রক্ষার জন্য ‘ছাওয়াল জন্ম দিতে হবে’।
মতিজান শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে,
‘আপনের আবার পুরুষ ছাওয়ালের শখ ক্যানহে? আপনের ছেইলে তো আপনেরে পুছে না’।
উত্তরে শাশুড়ি হুংকার দিয়ে বলে, ‘না পুছলে তোর কি হারামজাদি? তুই ছেইলে বিয়োবি, নইলে ভালা হবে না কয়্যা দিলাম’।
পুরুষ দ্বারা নিগৃহীত নারী নিজেই জানে না যে, সে কেন পুরুষ চায়? পুত্রসন্তান চায়? পুত্রের পুত্র চায়? সে শুধু জানে, পুরুষ বংশরক্ষা করে।
কিন্তু শাশুড়ির পুত্রসন্তানের আশায় পানি ঢেলে দিয়ে মতিজান মেয়ের জন্ম দেয়।
শাশুড়ি যখন বংশরক্ষার জন্য আবুলের আবার বিয়ে দিতে উদ্যত হয় ঠিক তখনই গল্পের শেষদিকে এসে মতিজান আসল ঘটনা ফাঁস করে দেয়।
সবাইকে সচকিত করে দিয়ে খিক্ খিক্ হেসে সে বললো, ‘বংশের বাত্তি? আপনের ছাওয়ালের আশায় থ্যাকলে হামি এই মাইয়া দুডাও পেত্যাম না’।
শক্তধাঁচের গ্রাম্য মহিলা শাশুড়ির বিস্ফারিত চোখের সামনে দু‘ হাতে দু‘ মেয়েকে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে থাকে মতিজান, আর মায়ের বুকের ভেতর থেকে জ্বলজ্বলে চোখে সবার দিকে তাকায় মতিজানের মেয়েরা। এখানেই শেষ হয় গল্পটা।লক্ষ্যণীয়, খুবই ইঙ্গিতগর্ভ এই গল্পের শেষটুকু। মতিজানের মেয়েরা তাদের মায়ের বুকের মধ্য থেকে জ্বলজ্বলে চোখে নতুন এই পৃথিবীটাকে দেখে যেন বুঝে নিতে চাইছে যে, একমাত্র নারীর বুকেই নারীর পরমাশ্রয়।
সমপ্রতি কন্যাসন্তানের সঙ্গে মায়ের গভীর সম্পর্ক যে নারীবাদী ভাবনাকে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে এই গল্পের শেষে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন গল্পকার।
বলা বাহুল্য, ভিন্ন ধাঁচে গড়া এক অনন্য সাহসী নারী মতিজান, যে পুরুষতান্ত্রিক অনুশাসন অগ্রাহ্য করে আত্মমুক্তি আর আনন্দের পথটুকু নিজে নিজেই খুঁজে নিয়েছে।
সময়ের ব্যতিক্রম এই নারী চরিত্রকে লেখক তার নারীবাদী ভাবনা থেকেই সৃষ্টি করেছেন।
মন ও শরীরের যৌথ অনুভব হচ্ছে মনো শরীরের বিষয়। এই বিষয়টা নিয়ে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের লেখা আরেকটা ছোট গল্প হলো ‘লিপিকার বিয়ে এবং অতঃপর’।
গল্পে ভালো ছাত্রী লিপিকার বিয়ে হয় আরেক ভালো ছেলের সাথে যে শুধু স্ত্রীর শরীরটাকেই পেতে চায়, মনটাকে নয়। আর স্বামীর কাছে লিপিকা চেয়েছে ব্যক্তিস্বাধীনতা। লেখাপড়া করে সে আত্মপ্রতিষ্ঠিত হতে চায়, কিন্তু তার ভদ্রলোক স্বামী আফসারের দৃষ্টিভঙ্গী একেবারে বিপরীত। স্ত্রীর ইচ্ছে–অনিচ্ছে তার কাছে কোনও গুরুত্বই বহন করে না। তার মতে, স্ত্রীর লেখাপড়া করে কী হবে? রোজগারতো করতে হবে না কখনো। কারণ আফসারের তো অনেক টাকা। বলাবাহুল্য লিপিকা স্বামীর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি। তার মতে, ‘আমিত্ব’ কখনোই বিকিয়ে দেয়ার বিষয় নয়। কিন্তু স্বামীর মতে, বিয়ের পর স্ত্রীর নিজের বলে কিছুই থাকে না। তার মেধা, সৌন্দর্য, নারীত্ব সবকিছুই স্বামীর।
এই প্রসঙ্গে লিপিকা আর আফসারের কথোপকথনটুকু একবার দেখে নেয়া যাক।
স্বামী আফসারের দখলদারিমূলক মনোভাবের প্রেক্ষিতে লিপিকা বলে, ‘তাহলে তোমার মেধা, সৌন্দর্য, পুরুষত্বের ওপর কার অধিকার’?
‘আমার জিনিস তো আমারই’।
স্বামীর এহেন অহংকারী উত্তরের প্রেক্ষিতে লিপিকা বলে, ‘তাহলে আমারটাও আমার নয় কেন? তোমার জিনিস দিয়ে তুমি ইচ্ছেমাফিক চলবে, আর আমারগুলো পায়ের তলায় পিষ্ট হবে’?
‘তুমি ভুলে যেও না লিপিকা যে, তুমি একটা মেয়ে’।
‘আমি মেয়ে, সেটাই তো আমার অহংকার’!
আফসারের মনোভাবের উত্তরে দৃপ্ত কণ্ঠের উত্তর লিপিকার।
এর চেয়ে আর কত আগ্রাসী হতে পারে পুরুষতন্ত্রের চেহারা?
না, এখানেই শেষ নয়, পুরুষতন্ত্রের চুড়ান্ত লক্ষ্যই যেন হয় নারীর শরীর! শুধুই নারীর শরীর।
এজন্যই লিপিকা বলে, ‘আমার শরীর আমি বিক্রি করবো তোমার কাছে। স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্কের ভিতে যদি পরস্পর পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা না থাকে তাহলে তো সেটা তো কেনা–বেচা। আমি দেবো, তুমি কিনবে। তুমি দেবে, আমি কিনবো’। হতভম্ব স্বামীর সামনে লিপিকা আরোও বলে, ‘সন্তান জন্ম নিলে তাও পুরুষের নয়, প্রধানত নারীর। কারণ, যে আধার বা স্থানে ভ্রুণটি বড় হবে সে অঙ্গটি আমার। তুমি চাইলেই তোমার দেহে শিশুটিকে বড় করতে পারবে না’। আলোচনার এই পর্যায়ে এসেই লিপিকা আফসারের তাকিয়ে থাকার মাঝে অসহায়ত্ব দেখতে পায়। একজন পরাজিত মানুষের চেহারা দেখতে পায়।
পরিশেষে বলা যায়, পাঠকনন্দিত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সকল গল্প মূলত এমনই। গল্পগুলো পড়লেই বোঝা যাবে, কোথায়, কীভাবে, কিসের মধ্যে লুকিয়ে আছে নারীমুক্তির মূলসূত্র পুরুষতন্ত্রের কাছে নারীর পরাজয় নয়, পরাভবস্বীকারও নয়, পুরুষতন্ত্রকে অগ্রাহ্য করেই যে নারীকে আপন মুক্তির পথ খুঁজে নিতে হবে সেলিনা হোসেন তাঁর গল্পে সেই বোধের পথগুলোই নির্দেশ করেছেন। শুধু গল্পের জন্য গল্প লেখা নয়, এই লেখালেখির মাধ্যমে তিনি সচেতনভাবেই একজন সমাজসংস্কারকের ভূমিকা পালন করেছেন। সমাজের প্রতি এই সৃষ্টিশীল লেখকের দায়বোধ সত্যিই উল্লেখযোগ্য।
লেখক : প্রাবন্ধিক, গল্পকার