চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেছেন, নারী উদ্যোক্তারা খুব কমই ব্যাংকের ঋণ খেলাপি হন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দেয়া উচিত। কারণ দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই নারী উদ্যোক্তারা আছেন, যারা অর্থের অভাবে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারছেন না।
গতকাল বুধবার সকালে নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে আইএলও কানাডা সরকারের অর্থায়নে প্রগ্রেস প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিডব্লিউসিসিআই) যৌথ আয়োজনে নারী উদ্যোক্তা : চট্টগ্রাম অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ শীর্ষক বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কর্মশালায় চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ২০০ উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এই চট্টগ্রামে প্রাণীজ ও কৃষিজসহ বিভিন্ন সম্পদ রয়েছে। কারণ এখানে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। আমাদের এসব পণ্য সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেজিং আন্তর্জাতিক ভ্যালুচেইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে বিশ্বব্যাপী পণ্য রপ্তানির জন্য আমাদের উদ্যোক্তাদের আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে এই যে কর্মশালার আয়োজন, আমি মনে করি এটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই ধরনের কর্মশালা নারী উদ্যোক্তাদের অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এছাড়া আরো নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসতে উৎসাহী করবে। রবীন্দ্রনাথ প্রশ্ন রেখেছিলেন -‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার, কেন নাহি দিবে অধিকার?’ এছাড়া নজরুলের কবিতার সেই বিখ্যাত লাইন-‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ ব্যবসা বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও কর্মক্ষেত্রেও আজ নারীরা নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
তিনি আরো বলেন, একটি বিষয় হলো–আমরা সকলে বলি, উদ্যোক্তা হও। উদ্যোক্তা হতে হলে টাকা লাগে, টাকা ছাড়া উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। সরকারের কাছে আমার আর্জি, সরকার যদি এফবিসিসিআই বা উইম্যান চেম্বারকে ১০০ বা ২০০ কোটি টাকার একটা থোক বরাদ্দ দেয়, তবে নারী উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসার একটা প্রোফাইল তৈরি করে আবেদন করতে পারে। যদি আবেদন যাচাই বাছাই করে তাদের ঋণ দেয়া যায়, তবে সেই ঋণের টাকার ওপর ১–২ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ধার্য করা যেতে পারে। অথবা তা দুই বছরের জন্য সুদমুক্ত হতে পারে। তবে এ টাকাটা তাদের অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। কারণ টাকা ফেরত পেলে সেই টাকা অন্য একজন পাবে। আমার মনে হয়, সরকার এটি ভেবে দেখতে পারে।
কর্মশালায় আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগ অনন্যভাবে একটি প্রাণবন্ত অর্থনৈতিক হাব হিসেবে স্থান পেয়েছে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমরা ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি অবস্থান থেকে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি, আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ করা এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক কর্মশক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য। আইএলও সিএমএসএমইকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কম উৎপাদনশীলতা, অনানুষ্ঠানিক উদ্যোগ, অর্থের সীমিত অ্যাঙেস, প্রতিযোগিতামূলক সমস্যা, দক্ষতার ফাঁক এবং বিঘ্নিত প্রযুক্তির কারণে চাকরি হারানোর ঝুঁকির মতো চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে অবশ্যই নারী উদ্যোক্তাদের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করব।
চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বারের সভাপতিত্বে আয়োজিত কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হাসান খান, ওয়েল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিরাজুল ইসলাম কমু, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবিদা মোস্তফা, উইম্যান চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআই পরিচালক ডা. মুনাল মাহবুব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমীর মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন, আইএলও’র প্রজেক্ট ম্যানেজার পেদ্রো জুনিয়র বেলেন প্রমুখ।