‘মৃত’ কিশোরীর ফিরে আসার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই নারায়ণগঞ্জে একই ধরনের আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। ছয় বছর আগের একটি অপহরণ ও গুমের মামলায় ‘মৃত’ ব্যক্তি আদালতে হাজির হওয়ায় পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যার ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মো. মামুন (২৬) নামের এক ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। খবর বিডিনিউজের।
একই দিন নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আফতাবুজ্জামান এই ঘটনার ব্যাখা চেয়ে পুলিশ ও সিআইডির তিন কর্মকর্তাকে লিখিত ব্যাখা দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। এই তিন কর্মকর্তা হলেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান ও এসআই জিয়া উদ্দিন উজ্জ্বল ও মামলার তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। সিআইডির নারায়ণগঞ্জ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট নাসির উদ্দিন বলেন, তদন্তে ত্রুটি বিচ্যুতি তো ছিলই। আদালত তিন কর্মকর্তাকে চার কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তে সিআইডির গাফিলিতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
ফিরে আসা যুবক মামুন সাংবাদিকদের বলেন, তাকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি তার বাবা-মার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
মামলার এজাহারে চাঁদপুর জেলার মতলব থানাধীন শাখারীপাড়ার আবুল কালাম অভিযোগ করেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার লামাপাড়ার তাসলিমার সঙ্গে তার ছেলে মামুনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ সর্ম্পকের জের ধরে ২০১৪ সালের ১০ মে মোবাইল ফোনে তার ছেলে মামুনকে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ থাকেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, এ ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে মামুনকে অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুম করা হয়েছে অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন আবুল কালাম।
ওই মামলায় গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা, তার বাবা রহমত উল্লাহ, ভাই রফিক, খালাত ভাই সাগর, সোহেল ও ছাত্তার মোল্লাকে আসামি করা হয়। পুলিশ ওই ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নেয়। রিমান্ড শেষে আদালতে এক আসামিকে হাজির করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন এসআই মিজানুর রহমান। কিন্তু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন মামলার সাক্ষী ও আবুল কালামের প্রাক্তন স্ত্রী মাকসুদা বেগম।
এই অপহরণ ও হত্যার মামলায় দেড় বছর কারাভোগ করে আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা বেগম। তাসলিমা আক্ষেপ করে বলেন, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মামুনকে অপহরণ ও খুন করার অপবাদ দেওয়া হয়েছে তাকে। ওই মিথ্যা মামলায় তার বাবা ভাইসহ আরও তিন জন বিভিন্ন মেয়াদে জেল হাজতে ছিলেন। তার পরিবারের কেউ মামুনকে চিনত না। তিনি বলেন, আমাকে ওর পরিবার (মামুন) মারধর করে আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে ফেলে। দেড় বছর মিথ্যা মামলায় আমাকে জেল খাটায় এবং আমাদের পরিবারের সবাইকে জেল খাটিয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী এমদাদ হোসেন সোহেল অভিযোগ করেন, পুলিশ সর্তকর্তা অবলম্বন করলে এই মামলাই নেওয়া হতো না। এই মামলার মধ্যে প্রচুর অসঙ্গতি আছে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত না করেই মামলা নিয়েছে এবং ছয় জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। কেউ অপহৃত না হয়েও অপহরণের মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তি কারাভোগ করায় মামলার বাদীসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি।