নাবিলার হারিয়ে যাওয়া

দীনা মরিয়ম | বুধবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:১১ পূর্বাহ্ণ

সাগর দেখতে খুব ভালো লাগে নাবিলার, তার বাবারও।সুযোগ পেলেই ওরা কক্সবাজারে চলে যায়। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার খুব দূরে না হলেও বেশ কয়েক ঘন্টার জার্নি। সকালে রওনা দিলে মোটামুটি দুপুরে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেখানে কোন হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে সোজা সমুদ্র সৈকতে চলে যায় ওরা। সৈকতের কাছে সারিবদ্ধভাবে আসন পাতা থাকে,মাথার উপরের অংশ ছাতার মতো শেড থাকেবেশ আধশোয়া হয়ে সাগর দেখা যায়। সেরকমই একটা আসনে নাবিলা ওর মাবাবার সাথে বসে আছে। পাশের আসনে বসে থাকা কয়েকজন ছেলে কেবল ওদের খেয়াল করছিলো, অন্যরা সব যে যার মতো ব্যাস্ত। আশে পাশে আর কোন আসন ফাঁকা নেই। সমুদ্রে ভাটা চলছে। সাগর পাড়ে অনেক লোকজনে ভীড়। তার ্‌উপর আছে বিভিন্ন রকম ফেরিওয়ালা। চা থেকে শুরু করে ঝিনুকের মালা, আচার ইত্যাদি নানান পদের জিনিস বিক্রি হচ্ছে। ওরাও মাঝে মাঝে এটাওটা কিনে খাচ্ছে আর টুকটাক কথা বলছে। নাবিলার মনে হলো সে ঝালমুড়ি খাবেসবাই মিলে ঝালমুড়ি খাওয়া হচ্ছে। নাবিলার মনে হলো সে সেদ্ধ ডিম খাবে, তাও কিনে দেয়া হলো। হঠাৎ একটা কাগজের খেলনা চোখে পড়লোকাগজের ফুল, বাতাসে ফুল ঘুরতে থাকে। ্‌নাবিলার ওই খেলনা চাই। নাবিলার বাবা সাফ মানা করে দিলেন-‘বাচ্চা যা চাইবে সবই দিতে হবে নাকি!’ নাবিলার কান্না শুরু হলোসে ওই খেলনা নেবেই নেবে। ঝালমুড়ির দাম মিটিয়ে দিতে দিতে এই নিয়ে বাপমেয়েতে কথাবার্তা হচ্ছে।এই কথাবার্তার ফাঁকেই রাগ করে একদিকে হেঁটে চলে গেলো নাবিলা।মুহূর্তেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো মেয়েটা। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে ওকে দেখা গেলো না। ওর বাবা খুঁজতে চলে গেলো, একটু পর মাও গেলো কিন্তু মেয়েটাকে দেখতে পেলো না ।

প্রথমে শুধু আশে পাশের লোকজনদের জিজ্ঞেস করা হলো,পরে সৈকতের যারা নিয়মিত থাকে যেমনসৈকতের গার্ড, বার্মিজ মার্কেটের দোকানদার, ফুসকাওয়ালা, এদের জিজ্ঞেস করা হলো বিশেষ কোন লাভ হলো না। দুশ্চিন্তা বাড়তে থাকলো। সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী একটা মেয়ে হুট করে কোথায় চলে গেলো, কোন খারাপ লোকের পাল্লায় পড়লো নাতো! নাহ, আর দেরি করা ঠিক হবে না। নাবিলার বাবা ট্যুরিস্ট পুলিশে খবর দিলেন। তারপর দিলেন লোকাল থানায়, একে একে পুলিশের বড়কর্তা এবং তাঁরও বড়কর্তা পর্যন্ত। রীতিমতো খোঁজ খোঁজ রব পড়ে গেলো কিন্তু মেয়েটাকে পাওয়া গেলো না। ওর বাবামা পুরোটা লাবণী বিচ খুঁজে ফেললো কোথাও নেই মেয়েটা। ওদের দুরাবস্থা দেখে পাশের আসনের ছেলেগুলোও খুঁজতে নেমে পড়লো। নাবিলার বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে গেলো যাতে মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পেলে দ্রুত জানাতে পারে।নাবিলার মা ভাবছে সময় মতো পাওয়া যাবে তো! সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে । সময়টা অমাবস্যার পর পর তাই সূর্যাস্তের সাথে সাথে পুরোটা বিচ অন্ধকারে ঢেকে আসবে। গাঢ় অন্ধকারে কেউ কাউকে চিনতে পারবে না। তার উপর রাত আটটায় জোয়ার। যদি আলো থাকতে থাকতে ওকে খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে বড় একটা বিপদ হয়ে যাবে। মেয়েটাকে তো জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। নাবিলার বাবা দুশ্চিন্তার চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েও খুঁজে চলেছেন মেয়েকে আর ওর মা তো আশা ছেড়েই দিয়েছে। এমন সময় একটা ফোন এলো নাবিলার বাবার কাছে,‘ভাইয়া,আপনার মেয়ে কলাতলি চলে এসেছে, এখন আমার সামনেই আছে, খেলা করছে, আপনারা টেনশন করবেন না। আমি ওকে নিয়ে আসছি।’ একটু পর দেখা গেলো পাশের আসনের যারা বসে ওদের লক্ষ্য করছিলো তাদেরই একজন নাবিলাকে কোলে করে এগিয়ে আসছে। নাবিলার বাবার ফোন নাম্বার নিয়ে ওকে খুঁজতে বেরিয়েছিলো ওরা। ওদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে হোটেলে ফিরে এলো মাবাবা। কোন ভাবে রাতটা কাটিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলে বাঁচে ওরা। কক্সবাজারে বেড়াতে আসাটাই মাটি হয়ে গেছে। প্র্রতিবার কক্সবাজার থেকে অনেক আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফেরে ওরা, এবার ফিরলো মন খারাপ করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিষ্ময়কর হিমালয় পর্বত
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে সাপের কামড়ে মৃত্যু