মিয়ানমার থেকে পালিয়ে নৌকা যোগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ঢেউ ও ঝড়ের কবলে পড়ে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় নাফ নদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকা থেকে আরও ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় লোকজন। যেখানে ৬ শিশু ও ৬ নারী রয়েছেন। এ নিয়ে দুই দিনে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ৩১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৩ জন নারী, ১৫ জন শিশু ও ৩ জন পুরুষ রয়েছেন। জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর জেটিঘাট এলাকা থেকে ২ শিশু ও ৩ নারী, সাগর তীববর্তী শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণপাড়া সৈকত থেকে ২ নারী ও ২ শিশু এবং পশ্চিমপাড়া সমুদ্র সৈকত থেকে ১ নারী ও ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে লাশগুলো দাফনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নাফনদী ও সাগর তীরবর্তী এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে রাতের আঁধারে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা নারী ও শিশু বহনকারী দুটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। ওইসব ঘটনায় নিখোঁজ থাকা নারী, পুরুষ ও শিশুর লাশ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভেসে আসছে।
এদিকে গত তিন দিনে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে অন্তত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, নৌকা যোগে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করা বেশ কিছু রোহিঙ্গা কৌশলে ক্যাম্পে প্রবেশ করলেও বিজিবি সদস্যরা কিছু সংখ্যককে আটক করতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল এবং নজরদারি জোরদার করেছে বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড।
বুধবার দুপুরে কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাব্বির আলম সুজন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে কোস্ট গার্ড। চলমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নাফ নদী ও সেন্টমার্টিন এলাকায় যেকোনো প্রকার অবৈধ কার্যক্রম প্রতিরোধে টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া, সেন্টমার্টিন ও উপকূলীয় অঞ্চলে টহল জোরদার করা হয়েছে। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ নিয়মিত হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল পরিচালনা করছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। তিনি আরও বলেন, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া ও সেন্টমার্টিনে অতিরিক্ত জনবল ও সরঞ্জাম মোতায়েন করে সার্বক্ষণিক পরিস্থতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেকোনো প্রকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।