চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার শীঘ্রই চাকসু (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ) নির্বাচন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি অনেকগুলো উদ্যোগের কথা জানিয়ে বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যে অল্প ভাড়ায় ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করবো। শীঘ্রই জো বাইক ও ইলেকট্রনিক বাইক চালু করবো। আবাসিক হলগুলোতে ওয়াশিং মেশিনের ব্যবস্থা করবো। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার জন্য আবাসিক শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করাবো। ক্যাম্পাসে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী উপদেষ্টা নিয়োগ করা হবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে মেডিকেল সেন্টারে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী কাউন্সিলর ঠিক করা হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার সর্বতোভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। কেউ তার খাতা পুনর্মূল্যায়ন করতে চাইলে তাকে সে সুযোগ দিতে হবে। আমরা সব সময় সর্বোচ্চ সেবা দিতে চাই। আত্মসমালোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।
গতকাল সোমবার চবির ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইয়াহ্ইয়া আখতার এসব কথা বলেন। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সকল ফি সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে জমা দেয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য। এ লিংক https://billpay.sonalibank.bd/cufee ব্যবহার করে আজ হতে চবি শিক্ষার্থীরা যাবতীয় ফি জমা দিতে পারবেন। এ সময় চবি উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটা পরিবার। এর উন্নতি করতে হলে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সকলের সহযোগিতা পাচ্ছিনা। অধিকাংশ শিক্ষক ক্লাস নিলেও এখনো কেউ কেউ নিয়মিত ক্লাস নেন না। কেউ কেউ চবি ওয়েব পোর্টালে তথ্য আপডেট করেন না। র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বাড়াতে হলে শিক্ষকদের গবেষণা ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমের তথ্য আপডেট করতে হবে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। আর সেজন্য নিয়োগের নিয়ম–নীতি বদলাতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপ–উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, চবির অনেক অর্জন আছে। সকলের সমন্বয়ে অগ্রগতি সাধন করতে হবে। সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে। টোটাল কোয়ালিটি মানাজেমেন্টের জন্য সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি চবি শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের জন্য শহর থেকে একটি আলাদা রাস্তা নির্মাণ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার দাবি জানান।
৫৯তম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও চবি উপ–উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন বলেন, চবির সকল বিভাগে পরীক্ষা ও ক্লাস চলমান রাখা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবারের আয়োজন খুব সীমিত পরিসরে করা হয়েছে। সবাই পাশে থাকলে অনেক এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। ইতোমধ্যেই চবির নতুন প্রশাসন বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এককভাবে চবির উন্নয়ন সম্ভব নয়, এজন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে চবি রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী চেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের প্রশাসনে কোন অনিয়ম চলবে না। কোনো ব্যাপারে দীর্ঘসূত্রতার অবকাশ নেই।
চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, চবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল–আমীন, শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. বেগম ইসমত আরা হক, চবি সিন্ডিকেট সদস্য ড. নঈম উদ্দিন হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী ও চবি ছাত্র উপদেষ্টা ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শাহাদাতবরণকারী ও আহত শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ও শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, এ ক্যাম্পাসের দুজন শহীদ ফরহাদ ও তরুয়ার নামে দুটো হলের নামকরণ করতে হবে। চবি শিক্ষার্থীদের ক্রেডিট ট্রান্সফার করার সুযোগ দিতে হবে। আহতদের পুনর্বাসন করতে হবে। গবেষণা খাতে বরাদ্দ ৫% থেকে আরো অনেক বাড়াতে হবে। এ ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চলবে না। সমন্বয়ক সুলতানা জেরিন নাহার বলেন, চবির শাটল ট্রেনে কমপক্ষে তিনটি বগি শুধু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত করে দিতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো নামাজের জায়গা ও অজুর ব্যবস্থা করতে হবে। সমন্বয়ক রাফি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারায় মডারেটরের মাধ্যমে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। সমন্বয়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, সেশনজটমুক্ত চবি চাই। সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল–মাহাথির বলেন, শিক্ষার্থীদের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চবির গবেষণা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হবে।
চবি শিক্ষার্থীদের অনলাইন ফি পেমেন্ট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংক পিএলসির প্রিন্সিপাল অফিসার মোস্তফা নাজমুল কাউসার অনলাইন পেমেন্টের বিস্তারিত তুলে ধরেন। এতে হাটহাজারী শাখার ম্যানেজার (এসপিও) যাদব চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।