প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। হাতে সময় আছে ছয় মাস। অথচ কয়েকটি র্যাম্পের নির্মাণ কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণ ঝুলে থাকায় প্রকল্পটি নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। রেলওয়ে থেকে জায়গা না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না আগ্রাবাদ ডেবার পাড় র্যাম্পের। ওয়াসার পাইপ না সরানোর ফলে শেষ করা যাচ্ছে না জিইসি মোড়ের র্যাম্পের কাজও। একইসাথে ম্যানোলা পাহাড় কেটে গড়ে তোলা দোকানগুলোর সামনের অংশ ভাঙতে না পারায় শেষ করা যাচ্ছে না গুরুত্বপূর্ণ জিইসি র্যাম্পের কাজ। এতে করে মুরাদপুর কিংবা বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে ছাড়া অন্য কোথাও থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার সুযোগ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পুরোপুরি পাচ্ছে না নগরবাসী। দ্রুততম সময়ের মধ্যে র্যাম্পগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা গেলে এক্সপ্রেসওয়ে অনেক বেশি কার্যকর হতো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াসা মোড় থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পটির পুরো অর্থায়ন করে সরকার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা সরকার অনুদান দেয়। বাকি ৫২৪ কোটি টাকা সরকার ঋণ হিসেবে প্রদান করে। ঋণের এই টাকা সরকারকে সিডিএ পরিশোধ করার কথা রয়েছে। এজন্য নগরীতে ইতোপূর্বে সরকারি টাকায় সিডিএ নির্মিত তিনটি ফ্লাইওভার টোল ফ্রি থাকলেও এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু যে পরিমাণ গাড়ি চলবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল বাস্তবে তার চেয়ে অনেক কম চলায় সরকারের ঋণ পরিশোধে সিডিএকে বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঠিক যেভাবে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল পরে সেভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য ১৫টি র্যাম্প নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সিডিএর। ২০১৭ সালে অনুমোদিত হওয়া এ প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ছয়টি র্যাম্প বাদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠানামার জন্য র্যাম্পের সংখ্যা ৯টিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি কিছুটা কমেছে। যে ৯টি র্যাম্প নির্মিত হওয়ার কথা রয়েছে তার মধ্যে আমবাগান এলাকার একটি র্যাম্পই শুধু নির্মিত হয়েছে। জিইসি মোড়ের গুরুত্বপূর্ণ র্যাম্পটিও নানা প্রতিবন্ধকতায় সময়মতো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এই র্যাম্পটি না থাকায় লালখান বাজার, টাইগারপাস বা জিইসি মোড় থেকে ওঠার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে ব্যবহারকারীদের মুরাদপুর বা ষোলশহর দুই নম্বর গেটে বায়েজিদ রোডের বেবি সুপার মার্কেটের সামনে থেকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার হয়ে ওয়াসা মোড়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এবং জনবহুল বিস্তৃত এলাকার মানুষকে র্যাম্পে উঠতে হলে উল্টো পথ ঘুরতে হচ্ছে। জিইসি মোড়ের র্যাম্পটির নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে এসে আটকে গেছে। ওয়াসা পাইপলাইন এবং ম্যানোলা হিলের পাদদেশে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা দোকানগুলোর সামনের অংশ ভাঙতে না দেওয়ায় র্যাম্পটির নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে এই র্যাম্প নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে।
এই র্যাম্পটি চালু করা হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বহু গুণে বেড়ে যাবে মন্তব্য করে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেও কাজটি শেষ করতে পারছি না। কাজ করারই সুযোগ পাচ্ছি না। তিনি বলেন, পাহাড় কেটে গড়ে তোলা দোকানগুলোর সামনের কয়েক ফুট ভাঙতে হবে। এটি করা না গেলে র্যাম্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আগ্রাবাদ রেলওয়ে ডেবার পাড় থেকে একটি র্যাম্প যুক্ত হবে এক্সপ্রেসওয়েতে। রেলওয়ে থেকে ২২ শতক জমি আমরা চেয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিন পরও এই জমি পাওয়া যায়নি। জমি না পাওয়ায় র্যাম্পটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছি না। অথচ আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আগ্রাবাদ ডেবার পাড় এলাকার র্যাম্পটি চালু করা গেলে এক্সপ্রেসওয়ের কানেক্টিভিটি অনেক বেড়ে যাবে।
এক্সপ্রেসওয়ের নয়টি র্যাম্পের মধ্যে বর্তমানে ফকিরহাট এলাকায় নামা, সিইপিজেড এলাকায় ওঠা এবং নামা, কেইপিজেড এলাকায় ওঠার র্যাম্পের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ পুরোপুরি শেষ করার কথা থাকলেও নানা সংকটে র্যাম্প নির্মাণ ঝুলে থাকায় তা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।